জিনতত্ত্ব ও বিবর্তনের প্রাথমিক ধারন

জীনতত্ত্ব:

জীববিজ্ঞানের যে শাখায় জিনের গঠন, কাজ, বংশপরম্পরায় সঞ্চারণের ধরন ও ফলাফল সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করা হয় তাকে বংশগতিবিদ্যা বা জীনতত্ত্ব বা Genetics বলে। Genetics শব্দটি গ্রিক শব্দের মূল রূপ gen শব্দ থেকে উদ্ভূত, যার অর্থ স্বরূপ ঘটা , উইলিয়াম বেটসন ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে সর্বপ্রথম Genetics শব্দটি প্রচলন করে।

জিনতত্ত্বের জনক:   

গ্রেগর জোহান মেন্ডেলকে জিনতত্ত্বের জনক বলা হয়। তিনি অস্ট্রিয়াবাসী একজন ধর্যযাজক ছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন মটরশুটি গাছ নিয়ে গবেষণা করে বংশগতি তথা জিনতত্ত্বের যুগান্তকারী দুটি সূত্র প্রদান করেন যা বর্তমানে জিন তত্ত্বের ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছে বলে গণ্য করা হয়। তাই ম্যান্ডেলাকে বংশগতিবিদ্য তথা জিনতত্ত্বের জনক বলা হয়।

মেন্ডেলিজম:

অস্ট্রিয়াবাসী ধর্মযাজক গ্রেগর জোহান মেন্ডেল  দীর্ঘ সাত বছর বিভিন্ন মটরশুটি গাছের উপর নানান পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে বংশগতি বিষয়ক যে দুটি সূত্র প্রদান করেন, সে সূত্র দুটিকে মেন্ডেলের সূত্র বা মেন্ডেলিজম বলে।

মেন্ডেলিয়ান ইনহেরিটেন্স:

সামাজিকভাবে মেন্ডেলের সূত্র সমূহের তথা মেন্ডেলিজম এর গবেষণা ও ফলাফলকে মেন্ডেলিয়ান ইনহেরিটেন্স বলে।

বংশগতি:

পিতা-মাতার বৈশিষ্ট্যসমূহ যে সুনির্দিষ্ট নিয়ম ও পদ্ধতিতে সন্তান-সন্ততিতে সঞ্চারিত বা স্থানান্তরিত হয় তাকে বংশগতি বলে।

জিন:  

জিন হলো DNA  অনুর এমন একটি খণ্ডিত অংশ যা একঅনু প্রোটিন সংশ্লেষণ এর জন্য প্রয়োজনীয় কোড বা সংকেত প্রদান করে। অন্যভাবে বলা যায় যে, জীবের বংশগতি মৌলিক ও কার্যিক একক যা বংশান্তরে জীবের বৈশিষ্ট্যের ধারক ও বাহক তাকে বলে। মেন্ডেলের  এদের ফ্যাক্টর (Factor) নাম দিয়েছিলেন।

 লোকাস:  

যে নির্দিষ্ট স্থানে জিন বা অ্যালিল ক্রোমোজোমে অবস্থান করে তাকে বলে। অর্থাৎ ক্রোমোজোমে জিনের নির্দিষ্ট স্থান এর নাম লোকাস।

অ্যালিল  বা অ্যালিলোমরফ:

কোনো জীবের নির্দিষ্ট ক্রোমোজোমের একই লোকাসে অবস্থিত হোমোজাইগাস বা হেটারোজাইগাস জিনগুলোকে পরস্পরের অ্যালিল বলে। যেমন- TT ( একই ধর্মী) ও Tt ( বিপরীত ধর্মী) ক্রোমোজোম এর নির্দিষ্ট  লোকাসে অবস্থানকারী জিন যুগল যারা একে অপরের অ্যালিল বা অ্যালিলোমরফ।

হোমোজাইগাস:

কোনো জীবের নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী অ্যালিল বা জিন দুটি একই ধর্মী হলে তাকে হোমোজাইগাস বলে। যেমন- লম্বা বৈশিষ্ট্যের অ্যালিল TT বা খাটো বৈশিষ্ট্যের অ্যালিল tt হলো হোমোজাইগাস জিনের উদাহরণ।  

 হেটারোজাইগাস:

কোনো জীব একটি নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী অ্যালিল দুটি বিপরীতধর্মী বা অসমপ্রকৃতির হলে তাকে হেটারোজাইগাস জীব বলে। যেমন- Tt অ্যালিল ধারী  জীবটি লম্বা হলেও তা হেটারোজাইগাস।

প্রকট বৈশিষ্ট্য:

এক জোড়া বিপরীত বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন হোমোজাইগাস জীবে(TT এবং tt) সংকরায়ন ঘটালে F1 জনুতে সৃষ্ট হেটারোজাইগাস জীবে (Tt) যে বৈশিষ্ট্যের প্রকাশ পায়, তাকে প্রকট বৈশিষ্ট্য বলে। যেমন- F1 জনুর মটরগাছে লম্বা (T) ও  খাটো (t) উভয় ধরনের লক্ষণের জন্য একটি করে জিন থাকলে ও জিবে (Tt) শুধুমাত্র লম্বা বৈশিষ্ট্য প্রকাশ ঘটায়। অতএব, মটরগাছের লম্বা বৈশিষ্ট্যটি প্রকট।

প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য:

একজোড়া বিপরীত বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন হোমোজাইগাস জীবে (TT এবং tt) সংকরায়ন ঘাটালে F1 জনুতে সৃষ্ট হেটারোজাইগাস জীবে (Tt) যে বৈশিষ্ট্যটি প্রকাশ পায় না কিন্তু তার জিন বিদ্যমান থাকে তাকে প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য বলে। যেমন- F1 জনুর মটরগাছের লম্বা (T) ও খাটো (t) উভয় ধরনের লক্ষণ এর জন্য একটি করে ডিম থাকলেও জিবে (Tt) শুধুমাত্র লম্বা বৈশিষ্ট্যর প্রকাশ ঘটে আর খাটো বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান থাকলেও অপ্রকাশিত থেকে যায়। অতএব, মটরগাছের খাটো বৈশিষ্ট্যটি প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য।