আন্ত্রিক সমস্যা-২

আন্ত্রিক-সমস্যা

গ্যাস্ট্রিক ও পেপটিক আলসার 

আলসার বলতে যে কোন এপিথেলিয়াম বা আবরণী টিস্যুর এক ধরনের ক্ষত বুঝায়। খাদ্যনালীর কোন অংশের আলসার কে পেপটিক আলসার বলে ।আর আলসার যদি পাকস্থলীতে হয় তাহলে তাকে গ্যাস্ট্রিক আলসার বলে এবং ডিউটি নামে হলে তাকে ডিওডেনাল আলসার বলে। 

আলসারের কারণ

দীর্ঘদিন ধরে খাদ্যগ্রহণে অনিয়ম হলে পাকিস্তানি আমলের আধিক্য ঘটে ক্ষত সৃষ্টির মাধ্যমে পেপটিক আলসার হতে পারে। তবে Helicobacter pylori নামক ব্যাকটেরিয়া দাঁড়াও গ্যাস্ট্রিক ও পেপটিক আলসার হতে পারে। 

আলসারের লক্ষণ

# পেটের ঠিক মাঝ বরাবর, নাভির একটু উপরে একঘেয়ে ব্যথা অনুভূত হয়।

# খালি পেটে বা অতিরিক্ত তেল জাতীয় খাদ্য খেলে ব্যথা বাড়ে। 

# আলসার মারাত্মক হলে বমি হতে পারে ।

# কখনো কখনো বমি এবং মলের সাথে রক্ত নির্গত হতে পারে। 

আলসারের প্রতিকার /  চিকিৎসা

এন্ডোস কপি বা বেরিয়াম এক্স-রের মাধ্যমে এ রোগ নির্ণয় করা যায়। 

# ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করাতে হবে ও ঔষধ গ্রহন করতে হবে।

# নিয়ম মেনে খাবার গ্রহণের পাশাপাশি সঠিক ডোজে এন্টিবায়োটিক খেতে হবে।

আলসারের প্রতিরোধ

১. নিয়মিত সহজপাচ্য খাদ্য গ্রহণ করা, অধিক তেল ও মসলা যুক্ত খাদ্য না খাওয়া।

২. ফোটানো দুধ, পনির ও কলা খাওয়া এবং নিয়মিত খাদ্য গ্রহণ করা।

৩. কফি, সিগারেট ইত্যাদি উত্তেজক পদার্থ গ্রহণ থেকে বিরত থাকা। 

 

এপেন্ডিসাইটিস

পেটের ডান দিকে বৃহদান্তের সিকামের সাথে যুক্ত অঙ্গুলের আকারের থলিকে অ্যাপেন্ডিক্স বলে। আর এপেনডিক্সের সংক্রমণকে এপেন্ডিসাইটিস বলে। 

এপেন্ডিসাইটিস এর কারণ

এপেনডিক্সের গহবর  বা লুমেন কোন কারনে বন্ধ হলে এপেন্ডিসাইটিস হয় । 

এপেন্ডিসাইটিস এর লক্ষণ

# প্রথমে নাভির চারদিকে ব্যথা অনুভব হয়।

# ব্যথা শুরু হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তলপেটের ডান দিকে সরে যায়। 

# ক্ষুধামন্দা, বমি, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়। 

এপেন্ডিসাইটিস এর প্রতিকার /  চিকিৎসা

১. রোগীকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তার দেখাতে হবে।

২. ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে।

৩. প্রয়োজনে শল্য চিকিৎসকের মাধ্যমে অ্যাপেন্ডিক্স অপসারণের ব্যবস্থা করতে হবে।

এপেন্ডিসাইটিস এর প্রতিরোধ

# প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা।

# খাদ্য তালিকায় আঁশযুক্ত খাবার রাখা।

# কোষ্ঠকাঠিন্য যেন না হয় সেদিকে লক্ষ রাখা।

# নিয়মিতভাবে বিশ্রাম নেওয়া এবং পরিমিত ঘুমানোর অভ্যাস গড়ে তোলা। 

কৃমিজনিত রোগ

বিভিন্ন ধরনের কৃমি (যেমন গোলকৃমি, ফিতাকৃমি,  সুতাকৃমি) দ্বারা মানুষের যে রোগ হয় তাকে কৃমিজনিত রোগ বলে। 

কৃমিজনিত রোগের কারণ

পরজীবী কৃমি বিশেষ করে মানুষের অন্ত্রে বসবাসকারী গোলকৃমি, ফিতাকৃমি ও সুতা কৃমি  এ ধরনের রোগের কারণ।

কৃমি জনিত রোগের লক্ষণ

# পেট ব্যথা, দুর্বল বোধ, বদহজম, পেটে অস্বস্তি বোধ করা ।

# বমি বমি ভাব, অনিদ্রা, খাওয়ায় অরুচি বোধ করা ।

# রোগীর চেহারা ফ্যাকাশে হওয়া, রক্তস্বল্পতা দেখা দিতে পারে ।

# হাত পা ফুলে যাওয়া বা পেট বড় হয়ে ফুলে যেতে পারে। 

# শিশুর জ্বর হলে অনেক সময় মলের সাথে এমনকি নাক-মুখ দিয়ে কৃমি বেরিয়ে আসতে পারে। 

কৃমি জনিত রোগের প্রতিকার /  চিকিৎসা

১. রোগীর মল পরীক্ষা করে কৃমির ডিম পাওয়া গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কৃমিনাশক ঔষধ খেতে হবে।

২. নির্দিষ্ট সময় পরপর সুস্থ হলেও কৃমিনাশক ঔষধ খেতে হবে।

কৃমি জনিত রোগের প্রতিরোধ

১. কাঁচা ফলমূল ধুয়ে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা ।

২. খাওয়ার আগে হাত ভালোভাবে ধোয়া।

৩. স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ব্যবহার করা।

৪. খালি পায়ে না হাঁটা এবং অল্প সিদ্ধ শাক-সবজি বা মাংস না খাওয়া। 

 

ডায়রিয়া

যদি দিনে অন্ততঃ ৩ বার পাতলা পায়খানা হয় তবে তাকে ডায়রিয়া বলে।  সব বয়সী মানুষের ডায়রিয়া হতে পারে।  তবে সাধারণত শিশুরা এতে দ্রুত কাহিল হয়ে পড়ে। ডায়রিয়া হলে রোগীর দেহ হতে পানীয় এবং লবণ বেরিয়ে যায়। 

ডায়রিয়ার কারণ

ডায়রিয়ার কারণ হলো দূষিত খাবার, দূষিত পানি, রোগজীবাণু এবং কৃমি রোটা ভাইরাস ডায়রিয়া জীবাণু গুলোর মধ্যে অন্যতম। 

ডায়রিয়ার লক্ষণ

# দেহের পানি কমে যায়, রোগী দুর্বল হয়ে পড়ে।

# দেহে পানি ও লবণের স্বল্পতা দেখা দেয়।

# ঘন ঘন পাতলা পায়খানা হয় ও বারবার বমি হয়।

# খুব পিপাসা লাগে, মুখ ও জিহ্বা শুকিয়ে যায়। 

# দেহের চামড়া কুচকে যায়, চোখ বসে যায় ও নিস্তেজ হয়ে পড়ে ।

# শিশুর মাথায় চাঁদি বা তালু বসে যায়।

# রোগী খাবার বা পানীয় ঠিকমতো খেতে চায় না।

ডায়রিয়ার প্রতিকার / চিকিৎসা

১. ডায়রিয়া রোগের লক্ষণ দেখা দিলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রোগীকে খাবার স্যালাইন খাওয়ানো শুরু করতে হবে।

২. পাতলা পায়খানা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত রোগীকে স্যালাইন খাওয়াতে হবে।  রোগীর বমি হলে স্যালাইন খাওয়া বন্ধ করা যাবে না।

৩. শিশুর রোগীকে নিয়মিত বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। 

৪. রোগীকে নিয়মিত অন্যান্য খাবারও খেতে দিতে হবে।

৫. ডায়রিয়া সেরে যাওয়ার পরও অন্তত এক সপ্তাহ রোগীকে বাড়তি খাবার দিতে হবে।

ডায়রিয়ার প্রতিরোধ

১. বিশুদ্ধ পানি পান করা।

২. বাসি পচা নোংরা খাবার না খাওয়া।

৩. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা।

স্যালাইন

ডায়রিয়া হলে রোগীর দেহ থেকে পানি ও লবণ বের হয়ে যায়। আর এই পানি ও লবণের চাহিদা পূরণের জন্য যে পানিও খাওয়ানো হয় তাকে স্যালাইন বলে। আজকাল খাবার স্যালাইন প্যাকেট বাজারে পাওয়া যায়। 

স্যালাইন তৈরি

খাবার স্যালাইন বানাতে হলে প্রয়োজন হবে চিনি, লবণ ও বিশুদ্ধ পানি। ভালো করে ফুটিয়ে ঠান্ডা করা আধা লিটার পানিতে ৩ চামচ চিনি ও তিন আঙ্গুলের এক চিমটি লবণ ভালোভাবে মিশিয়ে স্যালাইন তৈরি করা হয়।

শস্য স্যালাইন তৈরি

সম্প্রতি শস্য স্যালাইন নামে আরেকটি স্যালাইন উদ্ভাবিত হয়েছে। এক লিটার বিশুদ্ধ অর্থাৎ ভালোভাবে ফুটিয়ে ঠাণ্ডা করা পানি, ৫০ গ্রাম চালের গুঁড়া, এক চিমটি লবণ মিশিয়ে স্যালাইন তৈরি করা যায়। এ স্যালাইন বাজারে প্যাকেট কিনতে পাওয়া যায়। 

 

এ অধ্যায়ের অন্যান্য পাঠ-

# উদ্ভিদের পুষ্টিতে বিভিন্ন খনিজ উপাদানের ভূমিকা

# খাদ্য উপাদান

খাদ্য উপাদান-খাদ্যপ্রাণ বা ভিটামিন, খনিজ লবণ,পানি ও খাদ্যআঁশ বা রাফেজ

পুষ্টির অভাবজনিত রোগ সমূহ

# ক্যালরি ও ক্যালরি নির্ণয়

# BMR ও BMI নির্নয়

# খাদ্য সংরক্ষন ও খাদ্যে ভেজাল

# দাঁতের গঠন

# যকৃত ও অগ্নাশয়

# পাকস্থলীতে খাদ্য পরিপাক

# আন্ত্রিক সমস্যা-1

Rabaya Bashri: Rabaya Bashri is a Lecturer with 14 years of teaching experience in biological science. Just after complete her M.Sc (Botany) she joined teaching profession. Having First Class all through her educational life she never seek for other job. She served most renowned school and colleges in Dhaka and Narayangonj city.