যকৃত ও অগ্নাশয় সর্ম্পকিত যাবতীয় আলোচনা নিম্নে করা হল-

যকৃত  (Liver)

মানবদেহের সবচেয়ে বড় গ্রন্থিকে যকৃৎ । মানবদেহের পরিপাক তন্ত্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ন অঙ্গ হলো যকৃৎ। 

যকৃত এর অবস্থান

মধ্যচ্ছদা নিচে উদরগহ্বর এর উপরে পাকস্থলীর ডান পাশের যকৃৎ অবস্থান করে।

 যকৃতকে রসায়ন গবেষণাগার বলা হয় কেন

 মানবদেহের সবচেয়ে বড় গ্রন্থি হিসেবে পরিচিত যকৃত মানবদেহের পরিপাকতন্ত্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। যকৃত বিভিন্ন রকম জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে,  তাই যকৃতকে রসায়ন গবেষণাগার বলা হয়।

যকৃতের গঠন 

যকৃতের রং লালচে খয়রি। যকৃতের ডান খণ্ড-বিখণ্ড থেকে আকারে কিছুটা বড়।  প্রকৃতপক্ষে চারটি অসম্পূর্ণ খন্ড নিয়ে যকৃৎ গঠিত। প্রতিটি খণ্ড ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র লোবিউল দিয়ে তৈরি ।প্রত্যেকটি লোবিউলে অসংখ্য কোষ থাকে।এ কোষ পিত্তরস তৈরি করে। পিত্তরস ক্ষারীয় গুণসম্পন্ন। যকৃতে বিভিন্ন রকম জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে। যকৃতের নিচের অংশে পিত্তথলি বা পিত্তাশয় সংলগ্ন থাকে। এখানে পিত্তরস জমা হয়। পিত্তরস গাঢ় সবুজ বর্ণের এবং তিক্ত স্বাদ বিশিষ্ট। পিত্তথলি পিত্তনালী সাহায্যে অগ্ন্যাশয় নালির সাথে মিলিত হয় । এটি যকৃৎ অগ্ন্যাশয় নালীর মাধ্যমে ডিওডেনামে প্রবেশ করে। 

যকৃতের গঠন

যকৃতের গঠন

যকৃতের কাজ

১. যকৃৎ পিত্তরস তৈরি করে। পিত্তরসের মধ্যে পানি, পিত্ত লবণ, কোলেস্টেরল,  খনিজ লবণ ইত্যাদি থাকে যা পিত্ত থলিতে জমা হয়ে ডিওডেনামে এসে পরোক্ষভাবে পরিপাকে অংশ নেয়। 

২. যকৃত অতিরিক্ত গ্লুকোজ নিজদেহে গ্লাইকোজেন রূপে সঞ্চয় করে।

৩. পিত্তরস খাদ্যের অম্লাভাব প্রশমিত করে এবং ক্ষারীয় পরিবেশ সৃষ্টি করে । এই ক্ষারীয় পরিবেশ খাদ্য-পরিপাকের অনুকূল ।

৪. পিত্তরস চর্বি জাতীয় খাদ্য কে ক্ষুদ্র ডানায় পরিণত করে যার লাইপেজ এনজাইম এর সাথে পরিপাকে সহায়তা করে। 

৫. অতিরিক্ত অ্যামাইনো এসিড বাড়িতে আসার পর বিভিন্ন রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ইউরিয়া, ইউরিক অ্যাসিড ও অ্যামোনিয়া রূপে নাইট্রোজেনঘটিত বর্জ্য পদার্থ তৈরি করে এবং স্নেহজাতীয় পদার্থ শোষণে সাহায্য করে।

৬. রক্তে কখনো গ্লুকোজের মাত্রা কমে গেলে যকৃত সঞ্চিত গ্লাইকোজেনের কিছুটা অংশ গ্লুকোজে পরিণত হয় এবং রক্তস্রোতে মিশে যায়।  এভাবে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে।

৭. যখন বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন সমূহকে সঞ্চয় করে রাখে।

৮. যকৃৎ লৌহ ও পটাশিয়াম সঞ্চয় করে। 

অগ্নাশয় (Pancreas)

এনজাইম ও হরমোন নিঃসরণ কারীর মিশ্র গ্রন্থি কে বলে অগ্নাশয়

অগ্নাশয়ের অবস্থান

অগ্নাশয় পাকস্থলীর পেছনে আড়াআড়িভাবে অবস্থিত। 

অগ্নাশয়কে মিশ্র গ্রন্থি বলা হয় কেন

অগ্নাশয় মানবদেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ মিশ্র গ্রন্থি যা একাধারে পরিপাকে অংশগ্রহণকারী এনজাইম ও রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণকারী হরমোন নিঃসৃত করে। অর্থাৎ অগ্নাশয় বহিঃ ক্ষরা ও অন্তঃক্ষরা উভয় ধরনের গ্রন্থির মত কাজ করে। তাই অগ্নাশয় মিশ্র গ্রন্থি বলা হয়। 

অগ্ন্যাশয় এর গঠন

অগ্নাশয় পাকিস্তানি পেছনে অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ মিশ্র গ্রন্থি। অগ্নাশয় থেকে অগ্ন্যাশয় রস নিঃসৃত হয়। অগ্ন্যাশয় রস অগ্নাশয় নালির মাধ্যমে যকৃৎ অগ্ন্যাশয় নালী দিয়ে ডিওডেনামে প্রবেশ করে। এটি পরিপাকে অংশগ্রহণকারী এনজাইম নিয়ন্ত্রনকারী হরমোন নিঃসরণ করে। অর্থাৎ অগ্নাশয় বহিঃক্ষরা অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির মত কাজ করে। 

অগ্নাশয়ের গঠন

অগ্নাশয়ের গঠন

অগ্ন্যাশয় এর কাজ

১. অগ্ন্যাশয় হতে অগ্ন্যাশয় রস নিঃসৃত হয়। অগ্ন্যাশয় রস আছে ট্রিপসিন, লাইপেজ ও তা মাইলেজ নামক উৎসেচক । এসব এনজাইম শর্করা, আমিষ ও স্নেহজাতীয় খাদ্য পরিপাকে সহায়তা করে।

২. অগ্ন্যাশয় রস অম্ল ও ক্ষারের সাম্যতা, পানি সাম্যতা,  দেহতাপ প্রভৃতি নিয়ন্ত্রণ করে। 

৩. অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি হিসেবে অগ্নাশযয়ের একটি অংশ অতি প্রয়োজনীয় কিছু হরমোন,  যেমন -গ্লুকোজ ও ইনসুলিন নিঃসরণ করে। 

৪. গ্লুকাগন ও ইনসুলিন হরমোন দুটি গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ ও অন্যান্য শারীরবৃত্তীয় কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

৫. অগ্নাশয় অন্তঃক্ষরা ও বহিঃক্ষরা উভয় ধরনের গ্রন্থির মত কাজ করে। 

 

এ অধ্যায়ের অন্যান্য পাঠ-

# উদ্ভিদের পুষ্টিতে বিভিন্ন খনিজ উপাদানের ভূমিকা

# খাদ্য উপাদান

খাদ্য উপাদান-খাদ্যপ্রাণ বা ভিটামিন, খনিজ লবণ,পানি ও খাদ্যআঁশ বা রাফেজ

পুষ্টির অভাবজনিত রোগ সমূহ

# ক্যালরি ও ক্যালরি নির্ণয়

# BMR ও BMI নির্নয়

# খাদ্য সংরক্ষন ও খাদ্যে ভেজাল

# দাঁতের গঠন