এ পাঠে যা রয়েছে-
আন্ত্রিক সমস্যা
অজীর্নতা
নানা কারণে বদহজম হয় বা হজমের ব্যাঘাত ঘটে একে অজীর্ণতা বলে।
অজীর্নতার কারণ
পাকস্থলী সংক্রমণ, বিষন্নতা, অগ্ন্যাশয় রোগ, থাইরয়েডের সমস্যা ইত্যাদি ।
পেপটিক আলসার
পাকস্থলী ও অন্ত্রের আলসারের কারণে হজমে অসুবিধা দেখা দেয় একে পেপটিক আলসার বলে। একে সাধারণ মানুষ গ্যাস্ট্রিক বলে থাকে ।
অজীর্নতার লক্ষণ
#পেটের উপরের দিকে ব্যথা হয়।
# পেট ফাঁপা, পেট ভরা মনে হওয়া ।
# বুক জ্বালা করা, বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
# বুকব্যথা, টক ঢেকুর উঠা ।
অজীর্নতার চিকিৎসা / নিয়ন্ত্রণ
১ . অতিভোজন না করা।
২. আস্তে আস্তে ভালোভাবে চিবিয়ে খাওয়া।
৩. ধূমপান পরিহার করা।
৪. অজীর্ণ তার কারণ বের করে চিকিৎসকের পরামর্শমতো ওষুধ খাওয়া।
৫. বদহজম বা পেপটিক আলসারের সমস্যা অনেক সময় হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ এর সাথে মিলে থাকার কারণে চল্লিশোর্ধ্ব বয়সে লোকজনের উচিত চিকিৎসকের পরামর্শমতো ওষুধ সেবন করা।
আমাশয়
আমিবা বা সিগেলা নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা মানবদেহের অন্ত্রে সংক্রমণ ঘটলে তাকে আমাশয় বলে ।
আমাশয় এর কারন
Entamoeba histolytica নামক এক ধরনের প্রোটোজোয়া এবং সিগেলা (Shigella) নামক এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া।
আমাশয় এর লক্ষণ
# ঘন ঘন মলত্যাগ করা।
# মলের সাথে শ্লেষ্মা বের হওয়া।
# পেট ব্যথা।
# অনেক সময় শ্লেষ্মাযুক্ত মলের সাথে রক্ত যাওয়া।
# দুগ্ধজাত দ্রব্য হজম না হওয়া।
আমাশয় এর প্রতিকার বা চিকিৎসা
# চিকিৎসকের পরামর্শমতো ওষুধ সেবন করা।
# খাবার স্যালাইন গ্রহণ করতে হবে ও বিশ্রাম নিতে হবে।
# প্রচুর পরিমাণ তরল খাবার যেমন পানি, চিনির শরবত, ডাবের পানি, ফলের রস ইত্যাদি খেতে হবে।
আমাশয় এর প্রতিরোধ
১. বিশুদ্ধ পানি পান করা ।
২. শাকসবজি ও ফলমূল উত্তমরূপে পানি দিয়ে ধৌত করা।
৩. মলত্যাগের পর সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত ধোয়া।
৪. স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ব্যবহার করা।
৫. খাওয়ার আগে হাত ও থালা-বাসন ভালোভাবে ধুয়ে নেওয়া।
কোষ্ঠকাঠিন্য
যখন কারো মল শক্ত হয় কিংবা দুই বা তারও বেশি দিন মলত্যাগ হয় না এই অবস্থাকে বলা হয় কোষ্ঠকাঠিন্য ।
কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ
পায়খানার বেগ চেপে রাখলে, বৃহদান্ত্রের অপাচ্য খাদ্যাংশ থেকে অতি মাত্রায় পানি শোষিত হলে, পৌষ্টিক নালীর মধ্যে দিয়ে খাদ্যের অপাচ্য অংশ ধীরে ধীরে গমনে মল থেকে বেশি পানি শোষিত হলে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়। আবার পরিশ্রম না করলে, আন্ত্রিক গোলযোগে, কোলনের মাংসপেশি স্বাভাবিকের তুলনায় ধীরে ধীরে সংকুচিত হলে, রাফেজ বা আঁশযুক্ত খাবার না খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হবার সম্ভাবনা অনেকাংশে বেড়ে যায়।
কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণ
# মলত্যাগ কষ্টদায়ক হয়।
# পেটে অস্বস্তিকর অবস্থা, পেট ব্যথা ও নানারকম আনুষাঙ্গিক অসুবিধার সৃষ্টি হয়।
# দীর্ঘমেয়াদি কোষ্ঠ-কাঠিন্য থেকে হার্নিয়া সহ বিভিন্ন জটিলতার সৃষ্টি হয়।
কোষ্ঠকাঠিন্যের চিকিৎসা বা প্রতিকার
১. আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া, প্রচুর পানি পান করা।
২. ,শাকসবজি, আপেল, নারকেল, খেজুর, পেঁপে, আম, কমলা, আনারস ইত্যাদি নিয়মিত খাওয়া।
কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ
# নিয়মিত মলত্যাগের অভ্যাস করা।
# হাটা চলার অভ্যাস গড়ে তোলা ও প্রচুর পানি পান করা।
# রাফেজ বা আঁশযুক্ত খাবার নিয়মিত খাওয়া।
ক্ষুদ্রান্তে পরিপাককৃত খাদ্যের শোষণ
ক্ষুদ্রান্তের অন্তঃপ্রাচীর এ অবস্থিত রক্তজালক সমৃদ্ধ আঙুলের মতো প্রক্ষেপিত অংশ থাকে, একে ভিলাই বলে। আর এক বচনে বলে ভিলাস। প্রতিটি বিলাস এর মাঝখানে ল্যাকটিয়াল নামক লসিকা জালক রক্তে কৌশিকনালী দিয়ে পরিবেষ্টিত থাকে, ভিলাই ইলিয়াম এর ইলিয়ামের প্রাচীর আয়তন এবং ব্যাপকভাবে পরিপাক কার্য চলা সম্ভব। এসব রক্ত নালী যুক্ত হয়ে হেপাটিকা শিরা গঠন করে। এই শিরা দিয়ে শোষিত রক্ত যকৃতে আসে। স্নেহ পদার্থের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণার বিলাসের ল্যাকটিয়াল শোষিত হয় প্রথমে লসিকা দিয়ে বাহিত হয়ে রক্তস্রোতে মিশে। কষে অনুপ্রবেশের পর পিত্ত লবণ ফ্যাটি এসিড থেকে পুনরায় পৃথক হয়ে যায়। কৌশিক নালীর মধ্যে রক্ত প্রবাহিত হওয়ার সময় নারীর প্রাচীর ছুঁয়ে জলীয় পদার্থ বের হয়। এই জলীয় পদার্থ কে লসিকা বলে। লসিকা খাদ্য উপাদান সরবরাহ করে কোষে পৌঁছে দেয় এবং দূষিত পদার্থ সংগ্রহ করে রক্ত স্রোতে ফিরে আসে। শোষণের পর পাকমন্ডের অবশিষ্টাংশ কলোনে পৌঁছে।
আত্তীকরণ
শোষিত খাদ্যবস্তুর প্রোটোপ্লাজম এ পরিণত বা রূপান্তরিত করার প্রক্রিয়ায় হলো আত্তীকরণ। এটা একটি গঠনমূলক বা উপচিতি প্রক্রিয়া। কোষের প্রোটোপ্লাজম নিঃসৃত এনজাইমের সহযোগিতায় সরল খাদ্য জটিল উপাদানে পরিণত হয়।
এ অধ্যায়ের অন্যান্য পাঠ-
# উদ্ভিদের পুষ্টিতে বিভিন্ন খনিজ উপাদানের ভূমিকা
# খাদ্য উপাদান-খাদ্যপ্রাণ বা ভিটামিন, খনিজ লবণ,পানি ও খাদ্যআঁশ বা রাফেজ