এ পাঠে যা রয়েছে-
রক্ত সংবহনতন্ত্র:
যে তন্ত্রের মাধ্যমে রক্ত প্রতিনিয়ত দেহের বিভিন্ন অঙ্গ ও অংশে চলাচল করে, তাকে রক্ত সংবহনতন্ত্র বলে। জীবের রক্ত সংবহনতন্ত্র দুই ধরনের হয়।
যথা- মুক্ত সংবহনতন্ত্র ও বদ্ধসংবহনতন্ত্র।
বদ্ধসংবহনতন্ত্র:
যে রক্তপ্রবাহ কেবল হৃদপিণ্ড এবং রক্তনালীগুলো মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে, কখনো এর বাইরে আসে না। এ ধরনের সংবহনতন্ত্রকে বদ্ধ সংবহনতন্ত্র বলা হয়। মানবদেহে মানবদেহে বদ্ধ রক্ত সংবহনতন্ত্র রয়েছে।
রক্ত কি?
রক্ত হলো এক ধরনের তরল যোজক কলা, যা অস্বচ্ছ ক্ষারীয় এবং লবণাক্ত তরল পদার্থ।
রক্ত লাল কেন?
রক্তে তিন ধরনের রক্ত কণিকা রয়েছে, তারমধ্যে লোহিত রক্তকণিকায় হিমোগ্লোবিন নামক রঞ্জক পদার্থ থাকার কারণে রক্তের রং লাল দেখায়। হাড়ের লাল অস্থিমজ্জাতে রক্তকণিকার জন্ম হয়।
রক্তের উপাদান:
রক্তের উপাদান দুইটি। যথা- রক্তরস ও রক্ত কণিকা। রক্তের বর্ণহীন তরল অংশকে রক্ত রস বলে। রক্তে শতকরা প্রায় 55 ভাগ রক্তরস। রক্ত রক্তের প্রধান উপাদান পানি । আর রক্তের কোষগুলোকে বলে রক্তকণিকা । রক্তকণিকা তিন ধরনের যথা- লোহিত রক্তকণিকা, শ্বেত রক্তকণিকা ও অনুচক্রিকার ।
রক্ত কণিকার প্রকারভেদ
মানবদেহে তিন ধরনের রক্তকণিকা রয়েছে। নিচে এই তিন ধরনের রক্ত কণিকার বর্ণনা দেওয়া হলো –
লোহিত রক্তকণিকা
মানবদেহের লোহিত রক্ত কণিকার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি । লাল অস্থিমজ্জায় লোহিত রক্তকণিকা তৈরি হয়। এর গড় আয়ু 120 দিন । লোহিত রক্তকণিকায় দ্বি অবতল বৃত্তের মত। মানুষের লোহিত রক্তকণিকায় নিউক্লিয়াস থাকে না। লোহিত রক্ত কণিকার সংখ্যা প্রতি কিউবিক মিটারে প্রায় 50 লক্ষ।
লোহিত রক্ত কণিকার কাজ
১. লোহিত রক্তকণিকা অক্সিহিমোগ্লোবিন রূপে কোষে অক্সিজেন পরিবহন করে।
২. একইভাবে লোহিত কণিকা কোষে কোষে কার্বন ডাই অক্সাইড পরিবহন করে।
৩. লোহিত কণিকা কোষে খাদ্যসার পরিবহন করে।
৪. রক্তের সান্দ্রতা রক্ষা করে।
৫. লোহিত কণিকা রক্তে অম্ল -ক্ষারত্ব ও আয়নের ভারসাম্য বজায় রাখে ।
৬. লোহিত কণিকার গায়ে উপস্থিত বিভিন্ন এন্টিজেন দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বজায় রাখে ।
৭. দেহের বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাশনের জন্য লোহিত কণিকার কাজ করে।
শ্বেত রক্তকণিকা
শ্বেত রক্তকণিকার সংখ্যা লোহিত কণিকার তুলনায় অনেক কম। হিমোগ্লোবিন না থাকায় এদেরকে শ্বেত রক্তকণিকা বলা হয় । এর গড় আয়ু 1 থেকে 15 দিন । এর অ্যামিবার মত দেহের আকার পরিবর্তন করতে পারে । শ্বেত কণিকা নিউক্লিয়াসযুক্ত বড় আকারের কোষ । এর সংখ্যা প্রতি কিউবিক মিলিমিটার 4-10 হাজার। শ্বেত কণিকা অনেক ধরনের হয়। যেমন- লিম্ফোসাইট, মনোসাইট, নিউট্রফিল, ইউসিনোফিল ও বেসোফিল ।
শ্বেত রক্ত কণিকার কাজ
১. কয়েক প্রকার শ্বেত রক্তকণিকা ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় দেহকে জীবাণুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
২. শ্বেত কণিকা এন্টিবডি এন্টিজেন উত্পাদনের মাধ্যমে দেহের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
৩. এক প্রকারের শ্বেত কণিকা (নিউট্রোফিল) ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়া জীবাণুকে ভক্ষণ করে।
৪. বেসোফিল হেপারিন নিঃসৃত করে রক্তেকে রক্তবাহিকায় জমাট বাঁধতে দেয় না ।
৫. ইওসিনোফিল ও বেসোফিল হিস্টামিন নামক রাসায়নিক পদার্থ নিঃসৃত করে দেহে এলার্জি প্রতিরোধ করে।
অনুচক্রিকা
মানবদেহে অনুচক্রিকার সংখ্যা শ্বেত রক্ত কণিকার চেয়ে বেশি কিন্তু লোহিত রক্তকণিকার চেয়ে কম। ইংরেজিতে একে প্লাটিলেট বলে । এর গড় আয়ু 5-10 দিন। অনুচক্রিকা নিউক্লিয়াসবিহীন, গোলাকার, ডিম্বাকার, বা রড আকৃতির বর্ণহীন সাইটোপ্লাজমীয় চাকতি বিশিষ্ট অতিক্ষুদ্র ও অনিয়মিত আকারের কোষ। অনুচক্রিকা মানবদেহে প্রতি কিউবিক মিলিমিটার রক্তে প্রায় আড়াই(২.৫) লাখ ।
অনুচক্রিকার কাজ
১. অনুচক্রিকার প্রধান কাজ হলো রক্ত তঞ্চন করা বা রক্ত জমাট বাঁধানোতে সাহায্য করা।
২. অনুচক্রিকা রক্ত জমাট বাঁধে দেহের রক্তক্ষরণ বন্ধ করে।
৩. রক্তনালীর ক্ষতিগ্রস্ত এন্ডোথেলিয়াল আবরণ পুনরায় গঠন করে।
৪. অনুচক্রিকা সেরোটোনিন নামক রাসায়নিক পদার্থ উৎপন্ন করে যা রক্তনালির সংকোচন ঘটিয়ে রক্তপাত হ্রাস করে।
৫. ফ্যাগোসাইটোসিস পদ্ধতিতে কার্বন কনা, ইমিউন কমপ্লেক্স ও ভাইরাসকে ভক্ষণ করে।
এ অধ্যায়ের অন্যান্য পাঠসমূহ-
# জীবে পরিবহন- ব্যাপন, অভিস্রবন ও ইমবাইবিশন
View Comments (2)
Wonderful.🌷
Wonderful.🌷