মানব শ্বসনতন্ত্র

মানব-শ্বসনতন্ত্র

মানব শ্বসনতন্ত্র ।। Human respiratory system

 শ্বাসকার্য:

যে প্রক্রিয়ায় দিয়ে অক্সিজেন গ্রহণ এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিষ্কাশন করা হয় তাকে শ্বাসকার্য বলে।

শ্বসন:

যে জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়া জীবদেহের যৌগিক খাদ্য- বস্তুকে O2 এর সাথে জারিত করে মজুদ শক্তিকে ব্যবহারযোগ্য শক্তিতে রূপান্তর করে ও CO2 নিষ্কাশন করে তাকে শ্বসন বলে।

শ্বসনের সরল বিক্রিয়াটি হল-

C6H12O6 + 6O2————> 6CO2 + 6H2O + ATP

গ্লুকোজ/শর্করা + অক্সিজেন—–>কার্বন ডাই অক্সাইড+পানি+শক্তি                                         

শ্বসনতন্ত্র

যে  অঙ্গগুলোর সাহায্যে জীবের শ্বাসকার্য পরিচালিত হয়, সেগুলোকে একত্রে শ্বসনতন্ত্র বলে। শ্বসনতন্ত্রের অঙ্গগুলো হল-                            

i) নাসারন্ধ্র ও নাসাপথ

ii) গলবিল / ফ্যারিংন্কস

iii) স্বযন্ত্র / ল্যারিংন্সক

iv) শ্বাসনালী / ট্রাকিয়া

v) ব্রংকাস

 vi)ফুসফুস / লাঙ্গস

vii) মধ্যচ্ছদা /  ডায়াফ্রাম

মানব-শ্বসনতন্ত্র-ও-এর-বিভিন্ন-অঙ্গ

i) নাসারন্ধ্র ও নাসাপথ:

শ্বসনতন্ত্রের প্রথম অংশ নাক মুখগহ্বররে উপরে অবস্থিত একটি ত্রিকোণাকার গহ্বর।  এর সাহায্যে কোন বস্তুর সুগন্ধ বা দুর্গন্ধ বুঝা যায়। নাসাপথ সামনে নাসিকারন্ধ্র ও পিছনে গলবিল পর্যন্ত বিস্তৃত 

ii) গলবিল:

মুখগহ্বরে পিছনের অংশটি গলবিল যা নাসাপথরে পিছনের অংশের উপরিতলে আলজিহ্বা রয়েছে।

iii) স্বরযন্ত্র:

স্বরযন্ত্র গলবিলের নিচে এবং শ্বাসনালীর উপরে অংশ। এর দুইধারে দুইটি পেশি থাকে যাকে  ভোকাল কর্ড বলে। স্বরযন্ত্রের উপরে উপজিহ্ব বা এপিগ্লটিস  থাকে।

iv) শ্বাসনালি:

শ্বাসনালী বা  ট্রাকিয়া খাদ্যনালীর সামনে অবস্থিত একটি  ফাঁপা নল যা স্বরযন্ত্রের নিচের অংশ হতে শুরু করে কিছু- নিচে গিয়ে দুইভাগে বিরক্ত হয়ে দুইটি বায়ুনলের সৃষ্টি করে।

V) ব্রংকাস:

স্বরযন্ত্রের নিচের অংশে সৃষ্টি দুই ভাগে বিভক্ত  দুইটি বায়ুনল ফুসফুসে নিকটবর্তী স্থানে গিয়ে যথাক্রমে বাম ও ডান ফুসফুসে প্রবেশ করে। এগুলোকে ব্রংকাস বলে। 

VI) ফুসফুস:

ফুসফুস শ্বসনতন্ত্রের প্রধান অঙ্গ। বক্ষগহ্বরের ভিতর হৃদপিন্ডের দুই পাশে দুটি ফুসফুস অবস্থিত। ডান ফুসফুস তিন খণ্ডে ও বাম ফুসফুস দুই খণ্ডে বিভক্তভ এটি প্লুরা নামক আবৃত। 

Vii)মধ্যচ্ছদা:

বক্ষগহ্বর ও উদারগহ্বর পৃথককারী পেশীবহুল পর্দাকে মধ্যচ্ছদা বলে। এটি দেখতে ছাতার মতো এবং প্রশ্বাস গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

 

শ্বাসনালীর ঝিল্লি ও লোম যুক্ত হয় কেন ?

 শ্বাসনালীর প্রাচীর কতগুলো অসম্পূর্ণ বলয়াকার তরুণাস্থি ও পেশি দ্বারা গঠিত।এর অন্তর্গাত্র ঝিল্লি দ্বারা আবৃত। এই ঝিল্লিতে সূক্ষ্ম লোমযুক্ত কোষ থাকে। এর ভেতর দিয়ে বায়ু আসা-যাওয়া করে। শ্বাসনালীর ভেতর দিয়ে কোন অপ্রয়োজনীয়’ বস্তু প্রবেশ করলে সূক্ষ্ম লোমগুলো ধূলিকণাকে শ্লেষ্মার সাথে বাইরে বের করে দেয়। এই জন্য শ্বাসনালী  বা ট্রাকিয়া ঝিল্লি ও লোমযুক্ত হয়।

নাসাপথ  সামনে লোম  ও পিছনে পর্দা দিয়ে আবৃত কেন?

 আমাদের শ্বাস- প্রশ্বাসের সময় বায়ুতে বিদ্যমান ধূলিকণা,রোগজীবাণু এবং আবর্জনা থাকলে তা নাসাপথ এর সামনের লোম এ আটকে যায়। আর যে সকল ধূলিকণা, রোগজীবাণু আটকায় না তা নাসাপথের পিছনের পর্দার আটকে যায়। এতে বায়ু ফুসফুসে প্রবেশ করার পূর্বে কিছু পরিমাণে নির্মল হয়ে যায়। এছাড়াও শ্বসনের জন্য গৃহীত বায়ু নাসাপথের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় কিছুটা উষ্ণ এবং আর্দ্র হয়। এর ফলে হঠাৎ ঠান্ডা বায়ু ফুসফুসে প্রবেশ করে সাধারণত কোনো ক্ষতি করতে পারে না।

আলজিহ্বা খাদ্যগ্রহণে সাহায্য করে কিভাবে?

নাসাপথে এর পিছনের অংশরে উপরিতলে একটি ছোট জিহ্বার মত অংশ থাকে, একে আলাজিহ্বা  বলে। খাদ্য ও পানীয় গলাধঃকরণের সময় এটি নাসাপথের পশ্চাৎপথ বন্ধ করে দেয়। ফলে কোন প্রকার খাদ্য বা পানীয় নাসিকা পথে বাইরে আসতে পারে না। এছাড়াও আলাজিহ্বা খাদ্য গ্রহণের সময় প্রচুর পরিমাণে  পিচ্ছিল পদার্থ নিঃসরনকরে এবং স্বরযন্ত্রের বিবর্তনের সাতেও এটি সম্পর্ক্তি।  

উপজিহ্বা  বা এপিগ্লটিস কি কাজ করে ?

 স্বরযন্ত্রের উপরে একটি জিহ্বা আকৃতির ঢাকনা রয়েছে। একে উপজিহ্বা বা এপিগ্লটিস বলে। শ্বাস- প্রশ্বাস নেওয়ার সময় এটি খোলা থাকে এবং এ পথে বাতাস ফুসফুসে যাতায়াত করতে পারে। খাদ্য গ্রহণের সময় উপজিহ্বা স্বরযন্ত্রের মুখ ঢেকে দেয়। ফলে খাদ্যদ্রব্য সরাসরি খাদ্যনালীতে প্রবেশ করে।

অ্যালভিওলাস কি?

 শ্বসনতন্ত্রের প্রধান অঙ্গ ফুসফুস। আর এই ফুসফুসে রয়েছে অসংখ্য বায়ুথলি বা বায়ুকোষ, সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম শ্বাসনালী ও রক্তনালী। আর এই বায়ুথলিগুলোকে বলে অ্যালভিওলাস। বায়ুথলিগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনুক্লোম শাখাপ্রান্তে মৌচাকের মতো অবস্থিত। নাসাপথ দিয়ে বায়ু সরাসরি বায়ুথলিতে যাতায়াত করে। বায়ু প্রবেশ করলে এগুলো বেলুনের মতো ফুলে ওঠে এবং পরে আপনা-আপনি সংকুচিত হয়। বায়ুথলি ও কৈশিকনা নালিকার গাত্র এত পাতলা যে এর ভিতর দিয়ে গ্যাসীয় আদান-প্রদান ঘটে।

মধ্যচ্ছদার কাজ কী ?

 বক্ষগহ্বর ও  উদারগহ্বর পৃথককারী পর্দাকে মধ্যচ্ছদা বলে। এটি দেখতে অনেকটা প্রসারিত ছাতার মতো। মধ্যচ্ছদা সংকুচিত হলে নিচের দিকে নামে, তখন বক্ষগহ্বরের আয়তন বৃদ্ধি পায়। এটি প্রসারিত হলে উপরের দিকে উঠে এবং বক্ষ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। মধ্যচ্ছদা প্রশ্বাস গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

শ্বাসকার্য বা শ্বাসক্রিয়া কি ?

 যে প্রক্রিয়া দ্বারা অক্সিজেন গ্রহণ ও কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিষ্কাশন করা হয় তাকে শ্বাসকার্য বলে। স্নায়বিক উত্তেজনা দিয়ে শ্বাসকার্য পরিচালিত হয়। মূলত: এটি বহিঃশ্বসন।

প্রশ্বাস:

পিঞ্জরাস্থির মাংসপেশি ও মধ্যচ্ছদা সংকুচিত হয় নিচের দিকে নেমে যায় এবং বক্ষ গহ্বর প্রসারিত হয়। এতে বক্ষগহ্বরের ও বাইরের চাপের সমতা রক্ষা করার জন্য প্রশ্বাস বায়ু সহজেই ফুসফুসের ভিতর প্রবেশ করতে পারে।

নিঃশ্বাস:

আবার পিঞ্জরাস্থির মাংসপেশি ও মধ্যচ্ছদা পুনরায় প্রসারিত হয় উপরের দিকে উঠে যায় এবং বক্ষ গহ্বর স্বাভাবিক অবস্থায় আসে। এতে বক্ষগহ্বরের আয়তন কমে গিয়ে বায়ুর চাপ বেড়ে যায়। আর বক্ষগহ্বরের ভিতর ও বাইরের চাপে সমতা রক্ষা করার জন্য CO2 ও জলীয় বাষ্পপূর্ণ নিঃশ্বাস বায়ুর বাইরে বের হয়ে যায়। আর এভাবেই মানবদেহে  শ্বাসকার্য বা শ্বাসক্রিয়া চলতে থাকে।

এ অধ্যায়ের অন্যান্য পাঠসমূহ-

>>উদ্ভিদে গ্যাসীয় বিনিময়

Rabaya Bashri: Rabaya Bashri is a Lecturer with 14 years of teaching experience in biological science. Just after complete her M.Sc (Botany) she joined teaching profession. Having First Class all through her educational life she never seek for other job. She served most renowned school and colleges in Dhaka and Narayangonj city.