প্রস্বেদন ও এর প্রভাবক

প্রস্বেদন-ও-এর-প্রভাবক

প্রস্বেদন

উদ্ভিদ যে শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় তার বায়োবীয় অঙ্গের মাধ্যমে সংস্কৃত অতিরিক্ত পানি বাষ্পাকারে বের করে দেয় তাকে প্রস্বেদন বলে। 

প্রস্বেদনের প্রকারভেদ

প্রস্বেদন উদ্ভিদের বায়োবীয় অঙ্গের কোন অংশের মাধ্যমে ঘটে তার উপর ভিত্তি করে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে । যথা- 

১. পত্ররন্ধ্রীয় প্রস্বেদন

২.  কিউটিকুলার প্রস্বেদন

৩.  লেন্টিকুলার প্রস্বেদন 

১. পত্ররন্ধ্রীয় প্রস্বেদন

যে  প্রস্বেদন প্রক্রিয়া উচিত তার পাতা, কচিকান্ড,  ফুলের বৃতি ও পাপড়িতে থাকা  রন্ধ্রের মাধ্যমে তার অতিরিক্ত পানি বাষ্পাকারে বের করে দেয় তাকে পত্ররন্ধ্রীয় প্রস্বেদন বলে। কোন উদ্ভিদের মোট  প্রস্বেদনের  90 থেকে 95 ভাগ পত্ররন্ধের মাধ্যমে হয়ে থাকে।

২. কিউটিকুলার প্রস্বেদন

যে প্রস্বেদনের প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদের কিউটিকল ভেদ করে অতিরিক্ত পানি বাষ্পাকারে বের হয়ে যায়, তাকে কিউটিকুলার প্রস্বেদন বলে। 

৩. লেন্টিকুলার প্রস্বেদন

যে প্রস্বেদন প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদের কান্ডের বাকলে অবস্থিত লেন্টিকুলার ছিদ্রের মাধ্যমে অতিরিক্ত পানি বাষ্পাকারে বের হয়ে যায় তাকে লেন্টিকুলার প্রস্বেদন বলে। 

প্রভাবক

প্রস্বেদন  প্রক্রিয়া নানা ধরনের প্রভাবক দ্বারা প্রভাবিত হয়। এই প্রভাবক গুলোকে মোটামুটি দুই ভাগে ভাগ করা যায়।  বাহ্যিক প্রভাবক ও আভ্যন্তরীণ প্রভাবক। 

বাহ্যিক প্রভাবক

তাপমাত্রা

তাপমাত্রার তারতম্যের সাথে প্রস্বেদনের হার ওঠানামা করে। অধিক তাপে পানি সহজেই বাষ্পে পরিণত হয় ফলে প্রস্বেদনের হার বাড়ে আর তাপমাত্রা কমে গেলে প্রস্বেদনের হার কমে যায়। 

আপেক্ষিক  আর্দ্রতা

বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কে আপেক্ষিক আর্দ্রতা বলে। আপেক্ষিক আর্দ্রতা কম হলে বায়ু জলীয় বাষ্প গ্রহণ করতে পারে।  ফলে প্রস্বেদনের হার বেড়ে যায় । অন্যদিকে আপেক্ষিক আর্দ্রতা বেশি হলে বায়ু জলীয় বাষ্প গ্রহণ করতে পারে না ফলে প্রস্বেদনের হার কমে যায়।

আলো

আলোর উপস্থিতিতে পত্ররন্ধ্র খুলে যায়, ফলে প্রদানের হার বৃদ্ধি পায় । আবার অন্ধকারে পত্ররন্ধ্র বন্ধ থাকায় প্রস্বেদনের হার কমে যায়। 

বায়ুপ্রবাহ

বায়ুপ্রবাহের তারতম্যে প্রস্বেদনের হারের ও তারতম্য ঘটে। বায়ুচাপ বৃদ্ধিতে বাষ্পীভবন প্রক্রিয়া হ্রাস পায় ফলে প্রস্বেদন কমে যায়। আবার বায়ুচাপ কমে গেলে বাষ্পীভবন প্রক্রিয়া বৃদ্ধি পায় এবং প্রস্বেদনের হারও বেড়ে যায় ।

 

আভ্যন্তরীণ প্রভাবক

পত্ররন্ধ্র

পত্ররন্ধের সংখ্যা, আয়তন,  গঠন  এবং অবস্থানের উপর প্রস্বেদনের হার এর তারতম্য ঘটে। 

পত্রের সংখ্যা

পাতার সংখ্যা, আয়তন, গঠন ও অবস্থানের উপর প্রস্বেদনের হারে হ্রাস বৃদ্ধি ঘটে। 

পত্রফলক এর আয়তন

পত্রফলক এর আয়তন বড় হলে প্রস্বেদনের হার বেড়ে যায় এবং আয়তন কম হলে প্রস্বেদনের হার কমে যায়। 

উদ্ভিদের বায়ব অঙ্গের আয়তন

পাতা ও কান্ড সহ উদ্ভিদের বায়ব অঙ্গের কলেবর বৃদ্ধি পেলে প্রস্বেদনের হারও বেড়ে যায়। আর উদ্ভিদের কান্ড-পাতাসহ আকার ছোট হলে প্রস্বেদনের হারও কমে যায়। 

 

উদ্ভিদের প্রস্বেদন একটি অতিপ্রয়োজনীয় অমঙ্গল

প্রস্বেদন একটি অতি প্রয়োজনীয় অমঙ্গল। কারণ প্রস্বেদনের ফলে গাছের উপরের অংশের পানি ও খনিজ লবণ প্রবাহিত হয় । প্রস্বেদনের খাদ্য প্রস্তুত সহ অন্যান্য বিপাকীয় কাজে সহযোগিতা করে। কিন্তু পানি শোষণ এর চেয়ে প্রস্বেদনের ফলে পানি হারানোর হার বেশি হলে উদ্ভিদের জন্যে তা ক্ষতিকর হয়। প্রস্বেদনের যাতে মাত্রাতিরিক্ত না হয় এজন্য গাছ শীতকালে পাতা ঝরিয়ে দেয়। তাই বলা যায় যে, প্রস্বেদনে কিছু ক্ষতি সাধন হলেও উদ্ভিদের জন্য একটি অতি প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া।  তাই প্রস্বেদনের একটি অতি প্রয়োজনীয় অমঙ্গল বলা হয়। 

 

এ অধ্যায়ের অন্যান্য পাঠসমূহ-

# জীবে পরিবহন- ব্যাপন, অভিস্রবন ও ইমবাইবিশন

উদ্ভিদের মূলের সাহায্যে পানি শোষণ

Rabaya Bashri: Rabaya Bashri is a Lecturer with 14 years of teaching experience in biological science. Just after complete her M.Sc (Botany) she joined teaching profession. Having First Class all through her educational life she never seek for other job. She served most renowned school and colleges in Dhaka and Narayangonj city.