নেফ্রন এর গঠন ও বৃক্কের কাজ

নেফ্রনের-গঠন-ও-বৃক্কের-কাজ

নেফ্রন এর গঠন ও বৃক্কের কাজ

নেফ্রন: বৃক্কের ইউরিনিফেরাস নালিকা ক্ষরণকারী অংশ এবং কাজ করার একক কে নেফ্রন বলে। এক কথায় বৃক্কের গঠন ও কার্যিক একককে নেফ্রন বলে। মানব দেহের প্রতিটি বৃক্কে প্রায় ১০-১২ লক্ষ নেফ্রন থাকে।

নেফ্রনের গঠন

নেফ্রন প্রধানত দুটি অংশে বিভক্ত। যাত্রা-

ক) রেনাল করপাসরেনাল বা মালপিজিয়ান অঙ্গ

খ) রেনাল টিউব অয়েল

ক) রেনাল করপাসল:

নেফ্রনের অগ্রপ্রান্তকে রেনাল করপাসল বলে। এটি আবার দুটি অংশে বিভক্ত। যথা-

i) বোমান্স ক্যাপসুল

ii) গ্লোমেরুলাস 

i) বোমান্স ক্যাপসুল:

বোমান্স ক্যাপসুল গ্লোমেরুলাসকে বেস্টন করে থাকে। বোমান্স  ক্যাপসুল দুই স্তরবিশিষ্ট পেয়ালার মতো প্রসারিত একটি অংশ।

ii) গ্লোমেরুলাস:

গ্লোমেরুলাস একগুচ্ছ কৌশিক জালিকা দিয়ে তৈরি। গ্লোমেরুলাসে ২টি ধমনির সৃষ্টি হয়। যথা- ইফারেন্ট ধমনী ও অ্যাফারেন্ট ধমনী । গ্লোমেরুলাস ছাঁকনির মতো কাজ করে রক্ত থেকে পরিস্রুত তরল উৎপন্ন করে। এ তরলকে আল্ট্রাফিলট্রেট বলে।

খ) রেনাল টিউব্যুল:

বোম্যান্স ক্যাপসুলের অক্ষীয়দেশ থেকে সংগ্রহী নালী পর্যন্ত বিস্তৃত চওড়া নালীটিকে টিউব্যুল বলে। গ্লোমেরুলাস হতে প্রাপ্ত আলট্রফিলট্রেট তরল রেনাল টিউব্যুলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়। এই সময় এই তরল আরও কয়েক দফা শোষণ ও নিঃসরণ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যায় এবং সবশেষে যে তলরটি পাওয়া যায় সেটিই হলো মূত্র। প্রতিটি টিউব্যুল ৩টি অংশে বিভক্ত। যথা-

i) নিকটবর্তী প্যাঁচানো নালিকা

ii) হেনলির লুপ

iii) প্রান্তীয় প্যাঁচানো নালিকা

i) নিকটবর্তী প্যাঁচানো নালিকা:

এ নালিকাটি বোম্যান্স ক্যাপসুলের গোরা হতে হেনলির লুপ এর অগ্রভাগ পর্যন্ত বিস্তৃত। 

ii) হেনলির লুপ:

এটি নিকটবর্তী প্যাঁচানো নালিকার শেষ প্রান্ত হতে প্রান্তীয় প্যাঁচানো নালিকার অগ্রভাগ পর্যন্ত বিস্তৃত। হেনলির লুপ দেখতে ইংরেজি “U” অক্ষর আকৃতির।

iii) প্রান্তীয় প্যাঁচানো নালিকা:

এটি হেনলির লুপ এর শেষ প্রান্ত হতে সংগ্রাহক নালিকার অগ্র প্রান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত।

নেফ্রনের-গঠন

বৃক্কের কাজ

বর্জ্য অপসারণ:

রক্ত থেকে প্রোটিন বিপাকে সৃষ্টি নাইট্রোজেন ঘটিত বর্জ্য (ইউরিয়া, ইউরিক অ্যাসিড, অ্যামোনিয়া, ক্রিয়েটিনিন ইত্যাদি) পদার্থ বৃক্ক মানবদেহে থেকে অপসারণ করে।

মূত্র উৎপাদন:

বৃক্কের নেফ্রন একটি জটিল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ক্রমাগত মূত্র উৎপাদন করে।

অসমোরেগুলেশন:

বৃক্ক অসমোরেগুলেশন প্রক্রিয়া মানবদেহে পানির ভারসাম্য রক্ষা করে।

অম্ল ও ক্ষারের সমতায়:

বৃক্ক রক্তে অম্ল ও ক্ষারের ভারসাম্য রক্ষা করে।

আয়নিক গঠন নিয়ন্ত্রণ:

বৃক্ক রক্তে সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্লোরাইড ইত্যাদির আয়নিক গঠন বজায় রাখে ও পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে।

বিষাক্ত পদার্থ নির্গমন:

মানবদেহে বিভিন্ন ক্রিয়া বিক্রিয়ার ফলে উৎপন্ন অপ্রয়োজনীয় ও ক্ষতিকর বর্জ্য পদার্থ বৃক্কের কার্যকারীতার ফলে মূত্রের মাধ্যমে  দেহ হতে নির্গত হয়।

এনজাইম ও হরমোন:

বৃক্ক মানবদেহে বিভিন্ন ধরনের এনজাইম ও হরমোন ক্ষরনেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

অসমোরেগুলেশন:

মানবদেহের অভ্যন্তরে কোষকলায় বিদ্যমান পানি ও বিভিন্ন লবণের ভারসাম্য রক্ষা কৌশলকে অসমোরেগুলেশন বলে। যাবতীয় শারীরবৃত্তিক কাজ সম্পাদনের জন্য মানবদেহে পরিমিত পানি থাকা অপরিহার্য। মূলতঃ মূত্রের মাধ্যমেই সবচেয়ে বেশি পানি দেহ থেকে বের হয়ে যায়। দেহের পানিসাম্য নিয়ন্ত্রণে বৃক্ক প্রধান ভূমিকা পালন করে। কোন কারনে পানির পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে বৃক্ক নেফ্রনের মাধ্যমে পুনঃশোষণ প্রক্রিয়ায় বেশি পরিমাণে মূত্র উৎপন্ন করে। আবার দেহে পানির পরিমাণ কমে গেলে বৃক্কের নেফ্রন পুনঃশোষণ প্রক্রিয়া কমিয়ে কম পরিমাণে মূত্র উৎপন্ন করে। বৃক্কের এইভাবে পানির সাম্যতা বজায় রাখার প্রক্রিয়াই হলো অসমোরেগুলেশন। আর এভাবেই বৃক্ক অসমোরেগুলেশনে বিশেষ ভূমিকা রাখে।

 

এ অধ্যায়ের অন্যান্য পাঠসমূহ-

>> রেচনের প্রাথমিক ধারনা ও বৃক্কের গঠন

Rabaya Bashri: Rabaya Bashri is a Lecturer with 14 years of teaching experience in biological science. Just after complete her M.Sc (Botany) she joined teaching profession. Having First Class all through her educational life she never seek for other job. She served most renowned school and colleges in Dhaka and Narayangonj city.