আন্তঃক্রিয়া ও পরিবেশ সংরক্ষণ

আজকের এ আলোচনায় আন্তঃক্রিয়া ও পরিবেশ সংরক্ষন নিয়ে বিষদ আলোচনা করা হল। পরীক্ষায় উত্তর লিখার উপযোগী করে সাজানো হয়েছে ।

ধনাত্মক আন্তঃক্রিয়া ও ঋণাত্মক আন্তঃক্রিয়া

ধনাত্নক-ও-ঋনাত্নক-আন্তক্রিয়া

ধনাত্মক আন্তঃক্রিয়া

মিউচুয়ালিজম

যে ধনাত্মক আন্তঃক্রিয়া বা আন্তঃসম্পর্কে দুটি জীবের উভয়ই একে অন্যের দ্বারা উপকৃত হয় তাকে বলা হয় মিউচুয়ালিজম । যেমন- মৌমাছি প্রজাতি, পোকামাকড় প্রভৃতি ফুলের মধু আহরণের জন্য ফুলে ফুলে উড়ে বেড়ায় এবং বিনিময় ফুলের পরাগায়ন ঘটে । অথবা রাইজোবিয়াম ব্যাকটেরিয়া শিম জাতীয় উদ্ভিদের শিখরে অবস্থান  করে গুটি তৈরি করে এবং বায়বীয় নাইট্রোজেনকে সেখানে সংবন্ধন করে। ব্যাকটেরিয়া এই নাইট্রোজেন সহযোগী শিম উদ্ভিদকে সরবরাহ করে এবং বিনিময় সহযোগী উদ্ভিদ থেকে শর্করা জাতীয় খাদ্য পেয়ে থাকে ।

কমেনসেলিজম

যে ধনাত্মক আন্তঃক্রিয়া বা আন্তঃসম্পর্কে দুটি জীবের মধ্যে একজন মাত্র উপকৃত হয় কিন্তু অন্য সহযোগী সদস্য উপকৃত না হলেও কখনও ক্ষতিগ্রস্থ হয় না এ ধরনের আন্তঃসম্পর্ক কে কমেনসেলিজম বলে। যেমন- রোহিনী উদ্ভিদ মূলের সাহায্যে নিজেকে মাটিতে আবদ্ধ করে এবং অন্য বড় উদ্ভিদ কে আরোহন করে উপরে উঠে। এরূপে অন্য বৃক্ষের উপর প্রসারিত হয়ে বেশি পরিমাণে আলো গ্রহণ করে অথবা পরাশ্রয়ী উদ্ভিদ বায়ু থেকে খাদ্য গ্রহণ করে কিন্তু আশ্রয়দাতার কোনো ক্ষতি করে না ।

ঋণাত্মক আন্তঃক্রিয়া

শোষণ

 যে ঋণাত্মক আন্তঃসম্পর্ক বা আন্তঃক্রিয়ায় জীবদ্বয়ের একটি  জীব অন্য জীবকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করে নিজের অধিকার ভোগ করে তাকে শোষণ বলে ।যেমন- স্বর্ণ উদ্ভিদ হস্টোরিয়া নামক জসক অঙ্গের মাধ্যমে আশ্রয়দাতা উদ্ভিদ থেকে তার খাদ্য সংগ্রহ করে। অথবা কোকিল কখনো পরিশ্রম করে বাসা তৈরি করে না, কাকের বাসায় ডিম পাড়ে এবং কাকের দ্বারাই তার ডিম ফুটায়। 

প্রতিযোগিতা

কোন নির্দিষ্ট স্থানে আলো বাতাস পানি ও খাদ্যের জন্য গুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা হয়ে থাকে এ প্রতিযোগিতায় সুবিধাজনক বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন জীব সমূহ টিকে থাকে এবং অন্যরা বিতাড়িত হয়ে থাকে। 

পরিবেশ সংরক্ষণ

পরিবেশ-সংরক্ষন-ও-গ্রীন-হাউস-গ্যাস

পরিবেশ সংরক্ষণের গুরুত্ব

আমাদের চারপাশে যা কিছু আছে তাই নিয়ে আমাদের পরিবেশ। যদি এই পরিবেশের বিভিন্ন উপাদান যথা- মাটি, পানি, বায়ু ইত্যাদি দূষিত হয় তবে পরিবেশে বসবাস করার অযোগ্য হয়ে পড়ে। তাই পৃথিবীতে জীবের বসবাসযোগ্য রাখার জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ গুরুত্বপূর্ণ। নিচে পরিবেশ সংরক্ষণের গুরুত্ব সমূহ আলোচনা করা হলো-

১. পরিবেশ সুরক্ষিত থাকলে মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো যেমন- অন্ন,, বস্ত্র, বাসস্থান, ঔষধ, জ্বালানি ইত্যাদি পরিবেশ থেকে নিরবিচ্ছিন্নভাবে পাওয়া যাবে ।

২. পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হলে বনাঞ্চল ধ্বংস হবে ফলে বৃষ্টিপাতের হার কমে যাবে ও চাষাবাদে যথেষ্ট ক্ষতি হবে।

৩. বনাঞ্চল ধ্বংস হলে গ্রীনহাউজ গ্যাস বৃদ্ধি পাবে । আর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে মেরু অঞ্চলের বরফ গলে যাবে। ফলে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়ে উপকূল অঞ্চল তলিয়ে যাবে। 

৪. পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হলে আবহাওয়ার পরিবর্তন হবে। বিভিন্ন রোগ বালাইয়ের তীব্রতা বেড়ে গিয়ে ফসলের ক্ষতি হবে এবং ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের তীব্রতা বেড়ে যাবে। 

৫. পরিবেশ দূষণের কারণে মানুষের মধ্যে নতুন সব রোগের প্রকোপ দেখা দিবে। 

পরিবেশ সংরক্ষণের পদ্ধতি

পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য জীব বৈচিত্র সংরক্ষণ অত্যাবশ্যক । নিচে পরিবেশ সংরক্ষণের পদ্ধতি গুলো আলোচনা করা হলো- 

১. পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য বিশ্ববাসীকে এগিয়ে আসতে হবে ।পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। 

২. বৃক্ষরোপণ শুধু মাস বা সপ্তাহ সীমাবদ্ধ না রেখে প্রতিদিন যে পরিমাণ গাছ কাটা হবে ঠিক তার দ্বিগুণ পরিমাণ গাছ লাগানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে ।

৩. কোন এলাকায় শিল্প-কারখানা , বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রভৃতি নির্মাণের পূর্বে সেই এলাকার পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব হতে পারে কিনা তা বিবেচনা করতে হবে এবং বর্জ্য সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা করতে হবে ।

৪. পরিকল্পিত নগরায়ন করতে হবে। নগরায়নের সাথে অবশ্যই বৃক্ষরোপণ করতে হবে ।

৫. জ্বালানি হিসেবে কাঠ এর পরিবর্তে সৌর শক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। 

৬. মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক মাটির গুনাগুন, উপকারী জীবাণু, স্থলজ পোকামাকড় ধ্বংস করে স্থলজ ও জলজ বাস্তুতন্ত্র কে নষ্ট করে।  তাই পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য জৈব সারের ব্যবহার বাড়াতে হবে। রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার কমাতে হবে। 

৭. মাত্রাতিরিক্ত জনসংখ্যা বিভিন্নভাবে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটায়। জনসংখ্যা সীমিত রেখে সচেতন এবং শিক্ষিত জনগোষ্ঠী গড়ে তুলতে হবে।

৮. উপকূলীয় অঞ্চলে ভূমিক্ষয় রোধ করতে হবে যেন পরিবেশ বিপর্যস্ত না হয় ।

৯. নদী খনন করে এবং প্রাকৃতিক জলাধার গুলো সংরক্ষন করে পানি স্বাভাবিক প্রবাহ অব্যাহত রাখতে হবে। এতে লবণাক্ততা এবং জলাবদ্ধতা দূর হবে পানির বাস্তুতন্ত্র স্বাভাবিক থাকবে। 

১০. বায়ু দূষণ, মাটি দূষণ, পানি দূষণ, শব্দ দূষণ যাতে না হয়, সে রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

১১. জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিবেশ নীতি কে যথার্থ ভাবে অনুসরণ করতে হবে।  প্রয়োজন সড়ক নীতিনির্ধারক পর্যায়ে ব্যাপারে জোর দাবি উপস্থাপন করতে হবে ।

গ্রীন হাউজ গ্যাস

 গ্রীন হাউজ ইফেক্টের জন্য দায়ী গ্যাস কে বলা হয় গ্রীন হাউজ গ্যাস। যেমন- CO2, CO, CH4, N2O ইত্যাদি।

গ্রীন হাউস ইফেক্ট

 গ্রীন হাউস ইফেক্ট বা প্রতিক্রিয়া হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া যার দ্বারা ভূপৃষ্ঠ হতে বিকীর্ণ তাপ বায়ুমণ্ডলীয় গ্রীন হাউস গ্যাস সমূহ দ্বারা শোষিত হয়ে পুনরায় বায়ুমণ্ডলের অভ্যন্তরে বিকিরিত হয়। এ বিকীর্ণ তাপ ভূপৃষ্ঠের বায়ুমণ্ডলের নিম্ন স্তরের ফিরে এসে ভূপৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা কে বাড়িয়ে দেয়। 

এ অধ্যায়ের অন্যান্য পাঠসমূহ-
১. বাস্তুতন্ত্র ও বাস্তুতন্ত্রের উপাদান
২. একটি পুকুরের বাস্তুতন্ত্র
৩.খাদ্য শিকল বা খাদ্য শৃংখল ও খাদ্যজাল
৪. শক্তির পিরামিড
৫. বাস্তুতন্ত্রে পুষ্টি প্রবাহ


Rabaya Bashri: Rabaya Bashri is a Lecturer with 14 years of teaching experience in biological science. Just after complete her M.Sc (Botany) she joined teaching profession. Having First Class all through her educational life she never seek for other job. She served most renowned school and colleges in Dhaka and Narayangonj city.