পুষ্টির অভাবজনিত রোগ সমূহ

গয়টার

প্রচলিত অর্থে গলগন্ড বলতে থাইরয়েড গ্রন্থির যেকোনো ফোলা কে বুঝায়।  আর গলগন্ডের কিছু বিশেষ ধরনের গয়টার বলে। তবে সব গলগন্ড গয়টার নয়। গয়টার থাইরয়েড গ্রন্থির বিভিন্ন রোগের সাধারন বহিঃপ্রকাশ কে বুঝায়। 

গয়টার এর কারণ

 খাবারে আয়োডিনের অভাবে  গয়টার বা গলগন্ডের অন্যতম কারণ।  তবে থাইরয়েড গ্রন্থির বিভিন্ন রোগের কারণে গয়টার হতে পারে।

গয়টার এর লক্ষণ

# গলা অত্যাধিক ফুলে যাওয়া অর্থাৎ থাইরয়েড গ্রন্থিটি ফুলে যাওয়া।

# থাইরয়েড গ্রন্থিতে একটি বা একাধিক চাকা থাকে।

# থাইরয়েড গ্রন্থি ফুলে আশেপাশের চাপ পড়ে ফলে খেতে বা গিলতে কষ্ট হয়।

গয়টার এর চিকিৎসা/ প্রতিকার

অপারেশনের মাধ্যমে গয়টার এর চিকিৎসা করা যায়। 

গয়টার এর প্রতিরোধ 

আয়োডিন যুক্ত খাবার গ্রহণের মাধ্যমে গয়টার হতে দূরে থাকা সম্ভব। এছাড়া থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা থাকলে নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ঔষধ সেবনের মাধ্যমে গয়টার প্রতিরোধ করা যায়। 

পুষ্টির-অভাবজনিত-রোগসমূহ

পুষ্টির-অভাবজনিত-রোগসমূহ

 

রাতকানা 

ভিটামিন A এর অভাবজনিত রোগ জেরোফ্থ্যালমিয়া এর প্রথম পর্যায় বা সর্বনিম্ন মাত্রাকে রাতকানা বলে । সাধারণত 2 থেকে 5 বছরের শিশুদের মধ্যে এ রোগ বেশি হয়। 

জেরোফ্থ্যালমিয়া

ভিটামিন A এর অভাবে চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাকে জেরোফ্থলমিয়া নামক রোগ বলে।  ভিটামিন A এর অভাব পূরণ না হলে রোগটির মাত্রা ও তীব্রতা বাড়তে থাকে । জেরোফ্থলমিয়া সাত থেকে আটটি মাত্রা রয়েছে যার সর্বনিম্ন মাত্র হচ্ছে গিয়ে রাতকানা।

রাতকানা রোগের কারণ

 খাবারে ভিটামিন A এর অভাবে এই রোগ হয়। 



রাতকানা রোগের লক্ষণ

# চোখের রড কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় স্বল্প আলোতে ভালো দেখতে পায় না।

#  চোখে সবকিছু ঝাপসা দেখা যায়।  রোগটা বেড়ে গেলে করণীয় ঘোলাটে হয়ে যায়। 

রাতকানা রোগের প্রতিকার/  চিকিৎসা

রাতকানা দশা থেকে শুরু করে চতুর্থ ও পঞ্চম মাত্রায় জেনেলিয়া ভিটামিন-A সহ কিছু ঔষধ প্রয়োগে ভালো হয়।  তবে চূড়ান্ত মাত্রায় বা তার কাছাকাছি পৌছে গেলে করণীয় প্রতিস্থাপন তথা অস্ত্রোপচার ছাড়া আর তেমন কিছু করার থাকেনা। 

রাতকানা রোগের প্রতিরোধ

এই রোগ প্রতিরোধের জন্য ভিটামিন A  সমৃদ্ধ খাদ্য যেমন মাছের যকৃতের তেল, কলিজা, সবুজ শাকসবজি, রঙিন ফল ও সবজি ,পাকা আম  কলা, মিষ্টি কুমড়া, গাজর, মলা-ঢেলা মাছ খাওয়া উচিত।

রিকেটস 

শিশুদের ভিটামিন ডি এর অভাবে হাড় গুলোর নরম ও দুর্বল হয়ে বেঁকে যাওয়া কে রিকেটস রোগ বলে।  দুধ, মাখন, ডিম, কড লিভার তেল, ও হাঙ্গরের তেলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে মানুষের ত্বকে জমে থাকা কোলেস্টরেল থেকে ও ভিটামিন ডি তৈরি হয়।

রিকেটস রোগের কারণ

মূলত ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবারের অভাবে এ রোগটি হয়।  তবে অপর্যাপ্ত সূর্যালোকের সংস্পর্শে অথবা ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস এ দুটি খনিজ লবণের অভাবে এ রোগটি হয়। 

রিকেটস রোগের লক্ষণ 

# দেহের হাড় গুলো দুর্বল হওয়া।

#  গিট ফুলে যাওয়া ও দেহের কাঠামো ঠিক না থাকা।

#  হাড়গুলো বিশেষ করে পায়ের হাড় বেঁকে যাওয়া ।

#  হাড়গুলো ভঙ্গুর হয়ে যাওয়া এবং বক্ষদেশ শুরু হয়ে যাওয়া।

রিকেটস রোগের প্রতিকার/ চিকিৎসা

এই রোগ প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম,  অভাবের প্রকৃতি ও তীব্রতা নির্ধারণ করে ভিটামিন ডি এর যথাযথ দোষ দেওয়া এবং যতক্ষণ না স্বাভাবিক হয় ততক্ষণ পর্যন্ত ক্যালসিয়াম সম্পূরক দেওয়া। 

রিকেটস রোগের প্রতিরোধ

# পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার শিশুদের খাওয়াতে হবে।

#  নবজাতককে নিয়মিত কিছুক্ষণ করে রোদের সংস্পর্শে রাখা।

#  স্বাস্থ্যকর খাদ্য শিশুকে খেতে দিতে হবে বিশেষ করে দুগ্ধজাত খাবার, বুকের দুধ  ও ডিম খাবারের তালিকায় রাখতে হবে। 




রক্তশূন্যতা

 রক্তশূন্যতা হচ্ছে দেহের এমন একটি অবস্থা, যখন বয়স এবং লিঙ্গভেদে রক্তে হিমোগ্লোবিনের ঘনত্ব স্বাভাবিকের তুলনায় কমে যায়। আমাদের দেশে শিশু এবং নারীদের ক্ষেত্রে রক্তস্বল্পতা বা রক্তশূন্যতা একটি সাধারন রোগ।  শিশুদের, প্রজননের উপযুক্ত বয়সী নারীদের এবং গর্ভবতী অবস্থায় রক্তশূন্যতা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।

রক্তশূন্যতার কারণ

 খাদ্যের মুখ্য উপাদান লৌহ, ফলিক এসিড, ভিটামিন B-12  ইত্যাদির অভাব ঘটলে রক্তশূন্যতা হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার লৌহের ঘাটতি জনিত রক্তস্বল্পতা বেশি হয়। এছাড়াও এটি অত্যাধিক রক্তপাত হলে, কৃমির আক্রমণে,  অন্ত্রের সংক্রমণ হলে। 

রক্তস্বল্পতার লক্ষণ

# দুর্বলতা অনুভব করা ও চোখে অন্ধকার দেখা।

#  মাথাব্যথা,  অনিদ্রা ও মন মরা ভাব হওয়া ।

# খাওয়ার রুচি একেবারে কমে যাওয়া।

#  বুক ধরফর করা ইত্যাদি। 

রক্তশূন্যতার চিকিৎসা/ প্রতিকার

চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী লৌহ উপাদান সমৃদ্ধ ঔষধ ও পথ্য নিয়মিত সেবন করতে হবে। অন্ত্রের কৃমি সংক্রমণ হলে কৃমিনাশক ঔষধ সেবন করতে হবে। 

রক্তস্বল্পতার প্রতিরোধ

# লৌহ সমৃদ্ধ খাবার যেমন- যকৃত, মাংস, ডিম, চিনাবাদাম, শাকসবজি, বরবটি, মসুর ডাল, খেজুরের  ইত্যাদি খেতে হবে।

# নিয়মিত নির্দিষ্ট সময় পর পর কৃমিনাশক ঔষধ সেবন করতে হবে। 

 

আদর্শ খাদ্য পিরামিড

 শর্করা জাতীয় খাবার কে নিচের স্তরে রেখে  পর্যায়ক্রমে পরিমাণগত দিক বিবেচনা করে শাকসবজি, ফলমূল, আমিষ,  স্নেহ ও চর্বি জাতীয় খাদ্যকে সাজালে যে কাল্পনিক পিরামিড তৈরি হয় তাকে আদর্শ খাদ্য পিরামিড বলে। আদর্শ খাদ্য পিরামিডের অংশগুলো তার আকার অনুযায়ী নিচের দিকে বড় উপরের দিকে ছোট।  আদর্শ খাদ্য পিরামিড অনুযায়ী একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি কে সবচেয়ে বেশি শর্করা জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। এরপর শাকসবজি ফলমূল, মাছ, মাংস, ডিম আরো কম এবং চর্বিজাতীয় খাদ্য সবচেয়ে কম গ্রহণ করতে হবে।


সুষম খাদ্য

যেসব খাদ্য দেহের চাহিদা মেটানোর জন্য ও স্বাভাবিক পুষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় 6 টি উপাদানই  পরিমাণ মতো থাকে তাকে সুষম খাদ্য বলে। সুষম খাদ্যের উপাদান গুলো হল- শর্করা, আমিষ, স্নেহ, ভিটামিন, খনিজ লবণ ও পানি।

খাদ্য পিরামিড

খাদ্য পিরামিড

সুষম খাদ্যের বৈশিষ্ট্য

 সুষম খাদ্যের বৈশিষ্ট্যগুলো নিচে দেওয়া হল-

#  একজন মানুষের বিপাকের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি উৎপাদনের সামর্থ্য থাকতে হবে।

#  শর্করা, আমিষ এবং চর্বি নির্দিষ্ট অনুপাতে পরিমাণ মতো গ্রহণ করতে হবে।

#  খাদ্যে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও রাফেজ বা সেলুলোজ  সরবরাহের জন্য সুষম খাদ্য তালিকা ফল ও শাক-সবজি থাকতে হবে।

# খাদ্যে অবশ্যই প্রয়োজনীয় পরিমাণ পানি ও খনিজ লবণ থাকতে হবে। 

# সুষম খাদ্য অবশ্যই প্রয়োজনীয় সহজ পাচ্য হতে হবে।

 

এ অধ্যায়ের অন্যান্য পাঠ-

# উদ্ভিদের পুষ্টিতে বিভিন্ন খনিজ উপাদানের ভূমিকা

# খাদ্য উপাদান

# খাদ্য উপাদান-খাদ্যপ্রাণ বা ভিটামিন, খনিজ লবণ,পানি ও খাদ্যআঁশ বা রাফেজ