হরমোনজনিত অস্বাভাবিকতা
এ পাঠে যা রয়েছে-
থাইরয়েড সমস্যা
পর্যাপ্ত পরিমাণ থাইরয়েড হরমোন তৈরি না হলে যে যে সকল সমস্যা দেখা দেয় তাকে থাইরয়েড সমস্যা বলে।
থাইরয়েড সমস্যার কারন
খাবারের আয়োডিনের অভাবে এই রোগ হয়।
থাইরয়েড সমস্যার কারণ
# থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতি হলে শিশুদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয় ও বৃদ্ধি বিকাশ কমে যায়।
# থাইরয়েড হরমোনের অভাবে গায়ের চামড়া খসখসে হয়ে যায় , মুখমন্ডল গোলাকার এবং চেহারা স্বাভাবিক শিশুদের থেকে বৈসাদৃশ্য হয়ে থাকে ।
থাইরয়েড হরমোন সমস্যার সমাধান
# খাদ্যে আয়োডিনযুক্ত লবণ ব্যবহারের সুফল পাওয়া যায়।
# খাদ্য হিসেবে সামুদ্রিক মাছ, কলা, ফলমূল, কচু ইত্যাদি খেলে এই সমস্যা হতে মুক্তি পাওয়া যায়।
গয়টার কি?
থাইরয়েড গ্রন্থির যেকোনো ফুল আকে গলগন্ড বলে। আর গলগন্ডের কিছু বিশেষ ধরনের চিকিৎসা বিজ্ঞানে গয়টার বলে।গয়টার কে থাইরয়েড গ্রন্থির কোন নির্দিষ্ট রোগ বুঝায় না , বরং থাইরয়েডের বিভিন্ন রোগের এক সাধারন বহিঃপ্রকাশ কে বুঝায়।
ডায়াবেটিস
ডায়াবেটিস এর সংজ্ঞা
অগ্নাশয়ের আইলেটস অব ল্যাঙ্গারহ্যান্স নামক গ্রন্থিতে পর্যাপ্ত ইনসুলিন হরমোন তৈরি না হওয়ায় রক্তে শর্করা বৃদ্ধি বা প্রস্রাবের সাথে সরকারের নির্গত হওয়াকে বহুমূত্র বা ডায়াবেটিস বলে। এই রোগটি বংশগতভাবে বা পরিবেশের প্রভাবে হয়ে থাকে। স্থূলকায় ব্যক্তি অলস জীবনযাপনকারীদের এ রোগ বেশি হয়।
ডায়াবেটিসের প্রকারভেদ
ডায়াবেটিস প্রধানত দুই ধরনের ।যথা-
টাইপ-1 এবং টাইপ-2
টাইপ-1ঃ
যে ধরনের ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীর দেহে একেবারেই ইনসুলিন তৈরি হয় না তাকে টাইপ -1 ডায়াবেটিস বলে ।
টাইপ-2ঃ
যে ধরনের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর দেহে আংশিকভাবে ইনসুলিন তৈরি হতে পারে তাকে টাইপ-2 ডায়াবেটিস বলে।
ডায়াবেটিসের কারণ
ইনসুলিন নামক হরমোনের অপর্যাপ্ততার কারণে ডায়াবেটিস রোগ হয় এর ফলে রক্তে শর্করার পরিমাণ স্থায়ীভাবে বেড়ে যায় এবং প্রস্রাবের সাথে গ্লুকোজ নির্গত হয়।
ডায়াবেটিসের লক্ষণ
# ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া
# অধিক পিপাসা লাগা
# ক্ষুধা বেড়ে যাওয়া
# পর্যাপ্ত খাবার খাওয়া সত্ত্বেও দেহের ওজন কমতে থাকা
# দুর্বল বোধ করা বা ক্লান্তি বোধ করা
# চোখে কম দেখা
# চামড়া খসখসে ও রুক্ষ হয়ে যাওয়া
# ক্ষতস্থান সহজে না শুকানো ইত্যাদি
রোগ নির্ণয়
রক্ত বা প্রস্রাব পরীক্ষা করে গ্লুকোজের মাত্রা নির্ণয়ের মাধ্যমে এ রোগ নির্ণয় করা যায়।
ডায়াবেটিস এর প্রতিকার বা চিকিৎসা
চিকিৎসা করে ডায়াবেটিস রোগ একেবারে নিরাময় করা যায় না, কিন্তু এই রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। চিকিৎসকদের মতে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য তিনটি D মেনে চলা উচিত। যথা-
# Discipline(শৃঙ্খলা)
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সুশৃংখল জীবনব্যবস্থা মহৌষধ স্বরূপG নিয়মিত এবং ডাক্তারের পরামর্শ মত পরিমিত খাদ্য গ্রহণ, নিয়মিত ব্যায়াম, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, এবং বিশেষ পায়ের যত্ন নেওয়া, নিয়মিত প্রস্রাব পরীক্ষা করা ইত্যাদি শৃঙ্খলা মাফিক করা।
# (Diet(খাদ্য নিয়ন্ত্রণ)
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের অন্যতম উপায় হল খাদ্য নিয়ন্ত্রণ করা, মিষ্টি জাতীয় খাবার পরিহার করা ও ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত এবং সময়মতো খাদ্য গ্রহণ করা।
# Dose(ঔষধ সেবন)
ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী রোগীকে নিয়মিত ঔষধ সেবন করতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ সেবন করা উচিত নয়। কারণ ঠিকমতো চিকিৎসা না করা হলে রোগীর রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে অথবা কমে যেতে পারে। ফলে রোগী বেহুশ হয়ে পড়তে পারে এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।
স্ট্রোক
স্ট্রোক এর সংজ্ঞা
মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহের ব্যাঘাত ঘটার কারণে স্নায়ুতন্ত্রের কাজে ব্যাঘাত ঘটলে তাকে স্ট্রোক বলে।
স্ট্রোকের কারণ
মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ/ রক্তনালীর ভেতরে রক্ত জমাট বেঁধে রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্ত হওয়া এই দুই ভাবেই স্ট্রোক হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ হতেই সাধারণত মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হতে পারে।
স্ট্রোকের লক্ষন সমূহ
# বমি বমি ভাব হওয়া, প্রচন্ড মাথা ব্যথা হয়, কয়েক মিনিটের মধ্যে রোগী জ্ঞান হারিয়ে ফেলে
# ঘাড় শক্ত হয়ে যেতে পারে, মুখমন্ডল লাল বর্ণ ধারণ করে।
# মাংসপেশি শিথিল হয়ে যায়, শ্বসন ও নাড়ির স্পন্দন কমে যায়।
# অনেক ক্ষেত্রে রোগীর মুখ বেঁকে যায়।
# অনেক সময় রোগীর বাট নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ফলে রোগীর কথা জড়িয়ে যায়।
# মাথা ঘুরানো, হাটতে অসুবিধা হওয়া ,ভারসাম্য রক্ষায় অসুবিধা হওয়া ইত্যাদি ।
স্ট্রোকের চিকিৎসা/ প্রতিকার
# মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ বা রক্ত জমাট বেঁধেছে কি না তা নির্ণয় করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া।
# মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ বন্ধ করা সম্ভব নয় তবে মস্তিষ্কে জমে থাকা রক্ত অপারেশন করে বের করা যেতে পারে।
# রোগীর উচ্চ রক্তচাপ থাকলে তা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা।
# ফিজিওথেরাপিস্ট এর পরামর্শ মোতাবেক অবসাদগ্রস্ত অঙ্গ নড়াচড়া করান যেন শক্ত হয়ে যাওয়া রোধ করা সম্ভব হয়।
# রোগীকে উপযুক্ত শুশ্রূষা করা ও পথ্যের ব্যবস্থা করা।
স্ট্রোকের প্রতিরোধ
# ধূমপান পরিহার করা
# উচ্চ রক্তচাপ থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখা
# যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তাদের নিয়মিত ঔষধ সেবন করা
# দুশ্চিন্তামুক্ত, সুস্থ ,সুন্দর ও স্বাভাবিক জীবন যাপন করা
# স্থূলকায় হলে ওজন কমানোর চেষ্টা করা।