সমন্বয়ে মাদকদ্রব্যের প্রভাব

মাদকদ্রব্য

আমাদের দেশে সাধারণত তামাক,  গাঁজা, ভাং, চরস, আফিম, মর্ফিন, কোকেন, মদ ইত্যাদিকে মাদক বা মাদকদ্রব্য বলে ।মূলত যে সকল দ্রব্য সেবনে বা গ্রহণের মানুষের দেহে নেশার উদ্রেক হয় তাকেই মাদকদ্রব্য বলে।

সমন্বয়ে মাদকদ্রব্যের প্রভাব 1
বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য

মাদকাসক্ত

 যে সকল ব্যক্তি মাদক দ্রব্য গ্রহণ বা সেবন করে তাদেরকে মাদকাসক্ত বলে। মাদকাসক্ত একজন ব্যক্তি তার ইচ্ছা শক্তির উপর হার মেনে নেশাদ্রব্য গ্রহণে বাধ্য হয়। এমনকি মাদকের অর্থ জোগাড় করতে সেই ব্যক্তি অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ে। 

মাদকাসক্তির কারণ

মাদকাসক্তির বহুবিধ কারণ রয়েছে যেমন-

১.  মাদকদ্রব্যের প্রতি কৌতূহল ও সহজ আনন্দ লাভের চেষ্টা।

২.  মাদক আসক্ত বন্ধুবান্ধব ও সঙ্গীদের প্রভাব ।

৩. নতুন অভিজ্ঞতা অর্জনে আগ্রহ।

৪.  পরিবারে মাদকদ্রব্যের সহজলভ্যতা ।

৫. পরিবারের কলহে,  বিদ্বেষ এবং অশান্তি । 

৬.বেকারত্ব,  হতাশা, অভাব-অনটন ও পারিবারিক সম্পর্কের অবনতি ।

৭.  স্বাভাবিক সামাজিক ও পারিবারিক সম্পর্কের ঘাটতি ।

৮.  মাদকদ্রব্যের কুফল সম্পর্কে অজ্ঞতা ইত্যাদি ।

মানবদেহে নিকোটিনের প্রভাব

নিকোটিন এক প্রকারের স্নায়ু  বিষ। এটি এক ধরনের আসক্তি কোন রাসায়নিক দ্রব্য। তামাক ব্যবহারে,  জর্দা চিবিয়ে খেলে কিংবা ধূমপান করলে রক্তে নিকোটিন এর মাত্রা বেড়ে যায়।  নিকোটিন প্রাথমিকভাবে স্নায়ু কোষ গুলোকে উদ্দীপিত করে, পরে নিকোটিনের চাহিদা আরো বেড়ে যায়। ফলে নিকোটিনের এ চাহিদা মেটাতে জর্দা ব্যবহার বা ধূমপানের নেশায় মানুষ আসক্ত হয়ে পড়ে। নিকোটিনের কারণে  ধীরে ধীরে স্নায়ু কোষের কার্যকারিতা নষ্ট হতে থাকে। হাত-পা কিংবা মাথা অনৈচ্ছিক ভাবে কাপ্তে থাকে। ফলে কোন সূক্ষ্ম কাজ আর স্বাভাবিক ভাবে সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হয়।

স্নায়ুতন্ত্রের উপর মাদকদ্রব্যের প্রভাব

স্নায়ুতন্ত্রের উপর মাদকদ্রব্যের প্রভাব অনেক বেশি। মাদকাসক্তির কারণে একজন তার নিজস্ব ইচ্ছাশক্তির কাছে হার মেনে নেশাদ্রব্য গ্রহণ করতে বাধ্য হয় । নেশা বস্তুর কারণে তার চিন্তা শক্তি ক্রমে লোপ পায়। মাদকদ্রব্য ব্যবহারকারীরা কাজে মনোযোগ হারায়, সাধারন জীবন যাপনে ব্যর্থ হয়।  অতিরিক্ত নেশায় অচৈতন্য অবস্থায় কোন কোন স্থানে পরে থাকতেও পারে। মাদকাসক্ত ব্যক্তি নির্দিষ্ট সময় পরপর মাদক গ্রহণ করতে না পারলে তার কষ্ট হয়, এমনকি শরীরে অনিয়ন্ত্রিত খিঁচুনি ও হতে পারে। এজন্য মাদকের অর্থ জোগাড় করতে সেই ব্যক্তি অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়তে পারে। 

মাদকাসক্তির কুফল

মাদকদ্রব্য সেবনের ফলে মানসিক, শারীরিক , সামাজিক ও আর্থিক ক্ষতি সাধিত হয় যেমন –

১)  মানসিক ক্ষতি

মাদকদ্রব্য ব্যবহারের মানুষ তার কাজে মনোযোগ হারায়, সাধারণ জীবনযাপনের ব্যর্থ হয় এবং নিজস্ব ইচ্ছাশক্তির কাছে হার মেনে নেশাদ্রব্য গ্রহণে বাধ্য হয়।  একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তি ভালো মন্দের বিচার বিবেচনা করতে পারে না ফলে তার বিবেক বুদ্ধি লোপ পায়। এমনকি তার হাসি-কান্না ও বোধ থাকে না ।

২) শারীরিক ক্ষতি

 মাদক গ্রহণে ফুসফুস ও স্নায়ুতন্ত্রের অপূরণীয় ক্ষতি হয়। মাদক শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তিলে তিলে নষ্ট করে দেয়।  অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অকেজো হয়ে যায়। এতে হজম শক্তি বিনষ্ট হয়, খাদ্য স্পৃহা কমে যায়, দেশে ক্রমাগত অপুষ্টির বাসা বাঁধতে থাকে, স্থায়ী কফ,  কাশি এবং যক্ষ্মা রোগ সৃষ্টি হয়। অনেক সময় পঙ্গুত্ব বরণ করে নেয় এবং মৃত্যুমুখে পতিত হয়।

৩) সামাজিক ক্ষতি

 মাদক গ্রহণে মানুষ অস্থির  উশৃংখল হয়ে পড়ে। মাদকের টাকা জোগাড় করতে গিয়ে শুরু হয় চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, হত্যা , অপহরণসহ নানা ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপ ।কিছু কিছু মাদকসেবী সমাজে এইচআইভি ওহেপাটাইটিস বি এর সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয় ।

৪) আর্থিক ক্ষতি 

একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তি মাদক গ্রহণের জন্য দৈনিক প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হয়। ফলে ওই ব্যক্তি তার নিজের ও তার পরিবারের ধন-সম্পদের অপব্যয় ও অপচয় করে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ।

মাদকদ্রব্যের প্রভাব থেকে পরিত্রাণের উপায়

১.  পারিবারিক ও সামাজিকভাবে স্বাস্থ্যকর সম্পর্কের পরিবেশ বজায় রাখা ।

২. নৈতিক শিক্ষা কার্যক্রমের প্রসার করা।

৩.  বেকারদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা।

৪.  অসৎ বন্ধু-বান্ধব হতে দূরে থাকা ও এর কুফল সম্পর্কে অবহিত করা।

৫.  এই ব্যাপারে জনসচেতনতা গড়ে তোলা ও আইনের সঠিক প্রয়োগ করা।

৬.  শিক্ষকগণ তাদের সুন্দর চরিত্র, আচার-আচরণ, আদেশ ও উপদেশ এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মাদক মুক্ত থাকার জন্য নির্দেশনা ও উপদেশ দেওয়া। 

৭. দেশে মাধবপুর বিষয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

৮.  সরকারি ও বেসরকারিভাবে মাদকাসক্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা।

৯.  মসজিদ, মন্দির, গির্জা সহ সকল ধর্মীয় উপাসনালয়ে মাদকদ্রব্যের কুফল নিয়ে আলোচনা করা।

১০.  মাদকদ্রব্যের সহজলভ্যতা বর্জন, মাদক সেবন ও মাদক ব্যবসা বন্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা এবং সরকারের কড়া নতুন আইন বাস্তবায়ন একান্ত প্রয়োজন।