মানব দেহের হরমোনসমূহ- নালীবিহীন গ্রন্থি হতে নিঃসৃত রস রাজীবের রক্তের মাধ্যমে প্রবাহিত হয়ে দেহের বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কাজ নিয়ন্ত্রণ করে তাকে হরমোন বলে।  সুস্থ দেহের চাহিদা অনুসারে গ্রন্থি হতে অবিরত ধারায় হরমোন নিঃসৃত হয় ।

এ পাঠে যা রয়েছে-

প্রতিবর্তী ক্রিয়া

যেসব উদ্দীপনার প্রতিক্রিয়া মস্তিষ্ক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত না হয়ে সুষুম্নাকাণ্ড দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় তাকে প্রতিবর্তী ক্রিয়া বলে| এই ধরনের ক্রিয়া উদ্দীপনার আকস্মিকতায় ও তার কারণ স্বয়ংক্রিয় প্রতিক্রিয়া ফল| যেমন- হঠাৎ করে আঙ্গুলে সুচ ফুটলে বা হাতে গরম কিছু পড়লে আমরা দ্রুত হাতটি উদ্দীপনার স্থান থেকে সরিয়ে নেই| এটি প্রতিবর্তী  ক্রিয়ার ফল| আমরা চাইলেই প্রতিবর্তী ক্রিয়া কে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না| 

 আঙ্গুলে সুচ ফুটলে তাৎক্ষণিকভাবে হাত সরিয়ে নেই কেন?

অসতর্কভাবে সেলাই করার সময় আঙ্গুলে সুচ ফুটলে তাৎক্ষণিকভাবে হাত আমরা সরিয়ে নেই প্রতিবর্তী ক্রিয়ার কারনে|  আঙ্গুলে সুচ ফোটার সময় আঙ্গুলের ত্বকে অবস্থিত সংবেদী নিউরন ব্যথার উদ্দীপনা গ্রহণ করে| আঙ্গুলের ত্বক থেকে উদ্দীপনা সংবেদী নিউরন এর এক্সন এর মাধ্যমে স্নায়ু কান্ডের ধূসর অংশে পৌঁছায়।স্নায়ু কান্ডের ধূসর অংশে অবস্থিত সংবিধি নিউরনের এক্সন থেকে তড়িৎ রাসায়নিক পদ্ধতিতে উদ্দীপনা মধ্যবর্তী নিউরন এর মাধ্যমে আজ্ঞাবাহী স্নায়ু কোষের ডেনড্রাইটে প্রবেশ করে। আজ্ঞাবাহী স্নায়ুর এক্সন এরমাধ্যমে উদ্দীপনা পিসিতে প্রবেশ করে। উদ্দীপনা পেশীতে পৌঁছালে পেশীর সংকোচন ঘটে, ফলে উদ্দীপনা স্থল থেকে হাত দ্রুত আপনি সরে যায়। 

স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র

যে তন্ত্রের কার্যকারীতার উপর মস্তিষ্ক ও মেরুরজ্জুর কোনো প্রভাব না থাকায় এরা স্বাধীন বা স্বতন্ত্রভাবে আপন কর্তব্য সম্পাদন করে তাদেরকে স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র বলে। যেমন- হৃদপিন্ড, অন্ত্র, পাকস্থলী, অগ্নাশয় ইত্যাদি তন্ত্র গুলো স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র দ্বারা পরিচালিত হয়। 

উদ্দীপনা কিভাবে সঞ্চালিত হয়? 

পরিবেশ থেকে যে সংকেত স্নায়ুর ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মস্তিষ্কে পৌঁছায় তাকে স্নায়ু তাড়না বা উদ্দীপনা বলে । নিউরনের কার্যকারিতার ফলে উদ্দীপনা প্রয়োজনীয় অঙ্গগুলোতে সঞ্চালিত হয়। এটি মাংসপেশিতে সঞ্চালিত হলে পেশী সংকুচিত হয়ে সারা দেয়।  ফলে প্রয়োজনমতো দেহের বিভিন্ন অঙ্গ সঞ্চালিত হয়। এই তারণা গ্রন্থিতে পৌঁছালে সেখানে রস ক্ষরিত হয়। অনুভূতি বাহির স্নায়ু উত্তেজিত হলে সেই উত্তেজনা মস্তিষ্কের দিকে অগ্রসর হয়ে যন্ত্রণাবোধ, স্পর্শ জ্ঞান, দর্শন এ ধরনের অনুভূতি উপলব্ধি করায়। 

মানব দেহের হরমোনসমূহ
মানব দেহের হরমোনসমূহ

হরমোন 

নালীবিহীন গ্রন্থি হতে নিঃসৃত রস রাজীবের রক্তের মাধ্যমে প্রবাহিত হয়ে দেহের বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কাজ নিয়ন্ত্রণ করে তাকে হরমোন বলে।  সুস্থ দেহের চাহিদা অনুসারে গ্রন্থি হতে অবিরত ধারায় হরমোন নিঃসৃত হয়। 

মানবদেহের কিছু মুখ্য নালীবিহীন গ্রন্থির পরিচিতি 

মানবদেহের কয়েকটি মুখ্য নালীহীন গ্রন্থির নাম হল-

  • ১.  পিটুইটারি গ্রন্থি
    • ২. থাইরয়েড গ্রন্থি
    • ৩. প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থি
    • ৪.  থাইমাস গ্রন্থি
    • ৫.  অ্যাড্রেনাল গ্রন্থি  বা সুপ্রারেনাল গ্রন্থি 
    • ৬.  আইলেটস অব ল্যাঙ্গারহ্যান্স
    • ৭. গোনাড বা জনন গ্রন্থি 

পিটুইটারি গ্রন্থি

পিটুইটারি গ্রন্থির অবস্থান

পিটুইটারি গ্রন্থি মস্তিষ্কের নিচের অংশে অবস্থিত সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু সবচেয়ে ছোট গ্রন্থি।  

পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হরমোন

এই গ্রন্থি থেকে গোনাডোট্রপিক, সোমাটোট্রফিক, থাইরয়েড, উদ্দীপক হরমোন, এডরেনোকর্টিকোট্রপিন ইত্যাদি হরমোন নিঃসৃত হয়। 

পিটুইটারি হরমোন এর কাজ

এটি মানব দেহের প্রধান হরমোন উৎপাদনকারী গ্রন্থি।  কারণ একদিকে পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হরমোন সংখ্যায় যেমন বেশি, তেমনি অন্যান্য গ্রন্থির উপর এসব হরমোনের প্রভাব বেশি। এটি মানবদেহের বৃদ্ধি হরমোন নির্গত করে। 

থাইরয়েড গ্রন্থি 

থাইরয়েড গ্রন্থির অবস্থান

থাইরয়েড গ্রন্থি গলার ট্রাকিয়ার উপরের অংশে অবস্থিত। 

থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হরমোন

এই গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয় থাইরক্সিন ক্যালসিটোনিন ইত্যাদি হরমোন। 

থাইরয়েড হরমোনের কাজ

থাইরক্সিন মানবদেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি, বিপাকীয় কাজ নিয়ন্ত্রণ করে।  ক্যালসিটোনিন ক্যালসিয়াম বিপাকে সহায়তা করে। 

প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থি

প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থির অবস্থান

 মানুষের চারটি প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থি সবগুলোর অবস্থান থাইরয়েড গ্রন্থির পিছনে ।

প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থি হতে নিঃসৃত হরমোন

এই গ্রন্থি থেকে প্যারাথরমোন হরমোন নিঃসৃত হয় ।

প্যারাথাইরয়েড  এর কাজ

প্যারাথরমোন হরমোন মূলত ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাসের বিপাক নিয়ন্ত্রণ করে। 

থাইমাস গ্রন্থি

থাইমাস গ্রন্থির অবস্থান

থাইমাস গ্রন্থি মানবদেহের গ্রীবা অঞ্চলে অবস্থিত। 

থাইমাস গ্রন্থি হতে নিঃসৃত হরমোন

এই গ্রন্থি হতে থাইমোসিন হরমোন নিসৃঃত হয়।

থাইমাস গ্রন্থির কাজ

থাইমোসিন হরমোন দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার বিকাশে সাহায্য করে।

অ্যাডরেনাল বা সুপ্রারেনাল গ্রন্থি 

অ্যাডরেনাল বা সুপ্রারেনাল গ্রন্থি অবস্থান

অ্যাডরেনাল বা সুপ্রারেনাল গ্রন্থি গ্রন্থি কিডনির উপরে অবস্থান করে 

অ্যাডরেনাল বা সুপ্রারেনাল গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হরমোন

এই গ্রন্থি থেকে অ্যাডরেনাল  হরমোন নিঃসৃত হয়।

অ্যাডরেনাল বা সুপ্রারেনাল গ্রন্থি  কাজ

অ্যাডরেনাল হরমোন দেহে রক্ত আবশ্যকীয় বিপাকীয় কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে। এই হরমোন কঠিন শারীরিক ও মানসিক চাপ থেকে পরিত্রাণের সাহায্য করে ।

আইলেটস অব ল্যাঙ্গারহ্যান্স

 আইলেটস অব ল্যাঙ্গারহ্যান্স এর অবস্থান

আইলেটস অব ল্যাঙ্গারহ্যান্স অগ্ন্যাশয় এর মাঝে অবস্থিত। 

আইলেটস অব ল্যাঙ্গারহ্যান্স হতে নিঃসৃত হরমো

এই গ্রন্থি হতে ইনসুলিন ও গ্লুকাগন হরমোন নিঃসৃত হয় ।

আইলেটস অব ল্যাঙ্গারহ্যান্স এর কাজ

ইনসুলিন অগ্লোক আগুন হরমোন শর্করা বিপাক ও রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। 

গোনাড বা জনন অঙ্গ গ্রন্থি 

গোনাড এর অবস্থান

গোনাড গ্রন্থি মেয়েদের ডিম্বাশয় এবং ছেলেদের শুক্রাশয় অবস্থান করে। 

গোনাড এর নিঃসৃত হরমোন

এই গ্রন্থি মেয়েদের ইস্ট্রোজেন ও ছেলেদের টেস্টোস্টেরন হরমোন নিঃসৃত করে ।

গোনাড এর কাজ

এই গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হরমোন দেহের পরিণত বয়সের লক্ষনগুলো বিকশিত করতে ভূমিকা রাখে।  এছাড়াও প্রাণীর বৃদ্ধির পাশাপাশি ও যৌন আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে। 

হরমোন সম্পর্কিত অন্যান্য পাঠসমূহ-
১. বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ হরমোন ফটোট্রপিক চলন, ফেরোমেন
২. বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ হরমোন- সাইটোকাইনিন, ইথিলিন
৩. বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ হরমোন-অক্সিন ও জিবেরেলিন
৪. মানব প্রজননে হরমোনের ভূমিকা