উদ্ভিদে সমন্বয় অধ্যায়ে আজকে আমাদের আলোচ্য বিষয় বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ হরমোন-অক্সিন ও জিবেরেলিন বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা, এদের ব্যবহার ও কাজ।

বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ হরমোন-অক্সিন ও জিবেরেলিন 1
বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ হরমোন

উদ্ভিদে সমন্বয় 

উদ্ভিদের বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কার্যক্রম (যেমন -প্রজনন, সুপ্তাবস্থা, অঙ্কুরোদগম, বিপাক, বৃদ্ধি, চলন ইত্যাদি) একযোগে এবং প্রতিনিয়ত চলতে থাকে নিয়ম-শৃঙ্খলার মাধ্যমে,  এভাবে নিয়ম শৃংখলার মাধ্যমে কার্যক্রম চলার প্রক্রিয়া হল উদ্ভিদে সমন্বয় ।

হরমোন

 যে রাসায়নিক বস্তু কোষে উৎপন্ন হয় উৎপত্তিস্থল থেকে বাহিত হয়ে দূরবর্তী স্থানের কোষ বা কোষপুঞ্জের কার্যাবলী নিয়ন্ত্রণ করে তাকে হরমোন বলে। 

ফাইটোহরমোন

 যে জৈব রাসায়নিক পদার্থ উদ্ভিদ দেহে উৎপন্ন হয়ে উদ্ভিদের বৃদ্ধি, বিকাশ সহ বিভিন্ন অঙ্গ সৃষ্টির কাজ নিয়ন্ত্রণ করে তাকে ফাইটোহরমোন বলে। যেমন- অক্সিন, জিবেরেলিন, সাইটোকাইনিন, অ্যাসিটিক অ্যাসিড ইত্যাদি।

পস্টুলেটেড হরমোন

 যে সকল হরমোন উদ্ভিদের ফুল ও প্রজনন সংশ্লিষ্ট অঙ্গের বিকাশে সাহায্য করে তাদেরকে পস্টুলেটেড হরমোন বলে । যেমন-  ফ্লোরিজেন ভার্নালিন ইত্যাদি।

ফ্লোরিজেন

 ফ্লোরিজেন এক ধরনের পোস্ট রেটেড হরমোন যা পাতায় উৎপন্ন হয়ে পত্রমূলে স্থানান্তরিত হয় এবং তা পত্রমূলে স্থানান্তরিত হয়ে পত্রমুকুল কে পুষ্পমুকুল এ রূপান্তরিত করে। 

বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ হরমোন

 অক্সিন

 যেসকল ফাইটোহরমোন উদ্ভিদের ভ্রুণমুকুল আবরণীর অগ্রভাগে অবস্থিত থেকে উদ্ভিদের শাখা কলমে মূল গজায় ও অকালে ঝরে পড়া রোধ করে তাকে অক্সিন বলে ।এটি উদ্ভিদ দেহের প্রধান বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রক হরমোন, এর রাসায়নিক নাম হল ইনডোল এসিটিক এসিড (IAA)।

অক্সিনের কাজ

১.  অক্সিন প্রধানত উদ্ভিদের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে।

২.  অকালে ফল ঝরে পড়া রোধ করে।

৩. অক্সিন এর প্রভাবে বীজ হীন ফল উৎপন্ন হয়।

৪.  অক্সিন এর প্রভাবে উদ্ভিদের অভিস্রবণ ও শ্বসন ক্রিয়ার হার বেড়ে যায়।

অক্সিনের ব্যাবহার

১.  অক্সিন উদ্ভিদের শাখা কলম এর মূল উৎপাদনে সহায়তা করে তাই কলম তৈরিতে এর ব্যবহার রয়েছে।

২. বীজ হীন ফল উৎপাদনে অক্সিন ব্যবহৃত হয়।

৩.  উদ্ভিদের ডালপালা ছাঁটার পর ওই অঞ্চলের ক্ষতস্থান পূরণ করার জন্য অক্সিন ব্যবহার করা হয়।

৪. পাতা, ফুল ও ফলের ঝরেপড়া রোধে অক্সিন ব্যবহৃত হয়।

৫.  ক্যালাস নামক অনিয়ন্ত্রিত  কোষগুচ্ছ সৃষ্টিতে অক্সিন ব্যবহৃত হয়।

জিবেরেলিন

 উদ্ভিদের পাকা বীজে, চারাগাছ, বীজপত্র বর্ধিষ্ণু পাতা ইত্যাদি থেকে উৎপন্ন টারপিনয়েড জাতীয়  যে জৈব রাসায়নিক পদার্থ বীজের সুপ্ত দশা ভঙ্গ করতে, উদ্ভিদের বৃদ্ধি ঘটাতে ও ফুল ফোটাতে সাহায্য করে তাদেরকে জিবেরেলিন বলে।  এর রাসায়নিক নাম জিবরেলিক এসিড। জিবেরেলিন উদ্ভিদের পাকা বীজে সবচেয়ে বেশি উৎপন্ন হয় ।

জিবেরেলিন এর কাজ

১. জিবেরেলিন খাটো উদ্ভিদের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

২.  এটি সব উদ্ভিদে ফুল ফোটাতে সাহায্য করে ।

৩. জিবেরেলিন উদ্ভিদের মুকুল ও বীজের সুপ্তাবস্থা ভঙ্গ করতে সাহায্য করে। 

৪. এটি উদ্ভিদের পর্বমধ্য গুলোর দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি করে ফলে উদ্ভিদের কান্ডের অতিবৃদ্ধি ঘটে।

৫. অঙ্কুরোদগমেও জিবেরেলিন এর কার্যকারিতা রয়েছে।

জিবেরেলিন এর ব্যবহার

১. খাটো বা খর্বাকার উদ্ভিদে জিব্বেরেলিন হরমোন প্রয়োগ করলে অধিক অন্যান্য সাধারন উদ্ভিদ থেকেও অধিক লম্বা হয়ে যায়। 

২. বীজের সুপ্তাবস্থার দৈর্ঘ্য কমাতে জিবেরেলিন ব্যবহৃত হয় ।

৩. উদ্ভিদের ফুল ফোটাতে জিব্বেরেলিন হরমোন ব্যবহৃত হয়।

হরমোন সম্পর্কিত আরও জানতে মানব প্রজননে হরমোনের ভূমিকা পোস্টটি সহায়ক হিসেবে কাজ করবে।