পরাগায়ন 

ফুলের পরাগধানী থেকে পরাগরেণু একই ফুলের অর্থ বা একই জাতের অন্য ফুলের গর্ভমুণ্ডে স্থানান্তরিত হওয়ার প্রক্রিয়াকে পরাগায়ন বলে ।পরাগায়ন কে পরাগ সংযোগ বলা হয়।  পরাগায়ন ফুল এবং বীজ উৎপাদন প্রক্রিয়ার পূর্বশর্ত। পরাগায়নের হয়ে থাকে যথা- স্বপরাগায়ন ও পর পরাগায়ন ।

স্ব-পরাগায়ন

 একই ফুলের একই গাছের ভিন্ন দুটি ফুলের মধ্যে যখন পরাগায়ন ঘটে তখন তাকে স্বপরাগায়ন বলে। যেমন সরিষা, ধুতুরা ইত্যাদি।

স্ব-পরাগায়ন

স্ব-পরাগায়ন

পর পরাগায়ন

 একই প্রজাতির দুইটি ভিন্ন উদ্ভিদের ফুলের মধ্যে যখন পরাগ সংযোগ ঘটে তখন তাকে পরপরাগায়ন বলে।  যেমন শিমুল, পেঁপে। 

পরপরাগায়ন

পরপরাগায়ন

স্ব-পরাগায়ন এর সুবিধা



    •  পরাগরেণুর অপচয় কম হয়।
    •  পরাগায়নের জন্য বাহক এর উপর নির্ভর করতে হয় না।
    •  পরাগায়ন নিশ্চিত হয়। 
    •  উদ্ভিদ প্রজাতির চরিত্রগত বিশুদ্ধতা বজায় থাকে।

স্ব-পরাগায়ন এর অসুবিধা

    • স্বপরাগায়ন এর ফলে উৎপন্ন জীবের জিনগত বৈচিত্র কম থাকে।
    • স্বপরাগায়ন এ উৎপন্ন বীজের বা গাছের অভিযোজন ক্ষমতা কমে যায়।
    •  এই পদ্ধতিতে অচিরেই প্রজাতির বিলুপ্তি ঘটে।
    • স্বপরাগায়ন এ উৎপন্ন বীজের জীবনীশক্তি কমে যায় ।

পর পরাগায়নের সুবিধা

    • পরপরাগায়নের ফলে উৎপন্ন উদ্ভিদে নতুন চরিত্রের সৃষ্টি হয় অর্থাৎ জিনগত বৈচিত্র দেখা যায়। 
    • বীজের অঙ্কুরোদগমের হার বৃদ্ধি পায়।
    • বীজ অধিক জীবনীশক্তি সম্পন্ন হয়।
    • পরপরাগায়নের ফলে নতুন প্রজাতির সৃষ্টি হয় ।

পরপরাগায়নের অসুবিধা

    •  পর পরাগায়ন একটি বাহক নির্ভর প্রক্রিয়া হওয়ায় পরাগায়নের নিশ্চয়তা থাকে না ।
    • এই প্রক্রিয়ায় প্রচুর পরাগরেনুর অপচয় ঘটে ।
    • পরপরাগায়নের প্রজাতির বিশুদ্ধতা নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে ।



স্বপরাগায়ন ও পরপরাগায়নের তুলনা

পরাগ সংযোগ

 স্বপরাগায়নে একই ফুলে বা একই গাছের ভিন্ন দুটি ফুলের মধ্যে পরাগ সংযোগ ঘটে। অন্যদিকে পরপরাগায়নে একই প্রজাতির দুইটি ভিন্ন উদ্ভিদের ফুলের মধ্যে পরাগ সংযোগ ঘটে ।

পরাগরেণু

স্বপরাগায়ন এ পরাগরেণুর অপচয় কম হয়।  কিন্তু পরপরাগায়নে পরাগরেণুর অপচয় বেশি হয়। 

বাহক

 স্বপরাগায়ন বাঘের উপর নির্ভরশীল নয়। তবে পরপরাগায়ন বাহকের উপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল ।

পরাগায়নের নিশ্চয়তা

 স্বপরাগায়ন এ পর-পরাগায়ন হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নিশ্চিত।  কিন্তু পরপরাগায়নে পরাগায়ন হওয়ার নিশ্চয়তা থাকে না ।

প্রজাতির বিশুদ্ধতা

 স্বপরাগায়ন এর ফলে উৎপন্ন উদ্ভিদে প্রজাতির বিশুদ্ধতা বজায় থাকে। কিন্তু পর পরাগায়নে উৎপন্ন উদ্ভিদ প্রজাতির বিশুদ্ধতা বজায় থাকে না ।

বৈচিত্র সৃষ্টি

 স্বপরাগায়নের ফলে সৃষ্ট উদ্ভিদে বৈচিত্রতা সৃষ্টি হয় না। কিন্তু পরপরাগায়নের সৃষ্ট উদ্ভিদে বৈচিত্রতা দেখা যায় ।

পরাগায়নের মাধ্যম 

যে মাধ্যম পরাগ বহন করে স্ত্রী ফুলের গর্ভমুণ্ড পর্যন্ত নিয়ে যায়,  তাকে পরাগায়নের মাধ্যম বলে। বায়ু, পানি, কীটপতঙ্গ, পাখি, বাদুড়, শামুক  এমনকি মানুষ এ ধরনের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। এসকল বাহক ফুলে ফুলে বিতরনের সময় পরাগরেণু তাদের দেহের মাধ্যমে স্ত্রী ফুলের গর্ভমুণ্ডে লেগে গিয়ে পরাগায়ন ঘটায়। বাহক এর  সাহায্য পেতে ফুলের গঠন ও বিভিন্ন ধরনের হয়। যথা- পতঙ্গ পরাগী ফুল, বায়ু পরাগী ফুল, পানি পরাগী ফুল ,প্রাণী পরাগী ফুল ইত্যাদি ।

পতঙ্গ পরাগী ফুল

যে সকল ফুল পরাগায়নের জন্য পতঙ্গের উপর নির্ভরশীল তাদেরকে পতঙ্গ পরাগী ফুল বলে । যেমন- জবা, কুমড়া, সরিষা ইত্যাদি ।

বৈশিষ্ট্য

  •  ফুলগুলো বড় ,রঙিন ও মধু গ্রন্থি যুক্ত হয়।
  •  পরাগরেণু ও গর্ভমুণ্ড আঠালো  ও সুগন্ধযুক্ত হয় ।

বায়ু পরাগী ফুল

 যে সকল ফুল পরাগায়নের জন্য বাতাস বা বায়ুর উপর নির্ভরশীল তাদেরকে বায়ুপরাগী ফুল বলে ।যেমন -ধান ।

বৈশিষ্ট্য

  • ফুলগুলো হালকা, মধু গ্রন্থি হীন  ও সুগন্ধিহীন ।
  • এদের গর্ভমুণ্ড আঠালো, শাখান্বিত  ও কখনো কখনো পালকের মতো হালকা। 

পানি পরাগী ফুল

 যে সকল পরাগায়নের জন্য বাহক হিসেবে পানির উপর নির্ভরশীল তাদেরকে পানি পরাগী ফুল বলে । যেমন- পাতাশেওলা ।

বৈশিষ্ট্য

  •  ফুলগুলো আকারে ক্ষুদ্র, হালকা  ও সুগন্ধিহীন।
  • স্ত্রী পুষ্পের বৃন্ত লম্বা কিন্তু পুংপুষ্পের বৃন্ত ছোট ।

 

প্রাণী পরাগী ফুল

যে সকল ফুল পরাগায়নের জন্য বাহক হিসেবে প্রাণীর উপর নির্ভরশীল, তাদেরকে প্রাণী পরাগী ফুল বলে।  যেমন -কদম, শিমুল, কচু।

 বৈশিষ্ট্য

  •  ফুলগুলো মোটামুটি বড় ধরনের এবং রং আকর্ষণীয়।
  •  ছোট ফুলগুলো পুষ্পমঞ্জরি তে সাজানো থাকে।
  •  ফুলের সুগন্ধ থাকতেও পারে আবার নাও থাকতে পারে ।