ডায়ালাইসিস ও বৃক্ক প্রতিস্থাপন

বৃক্ক বিকল:

নেফ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনিতে পাথর ইত্যাদি কারণে বৃক্ক ধীরে ধীরে বিকল বা অকার্যকর হলে তাকে বৃক্ক বিকল হওয়া বলে। 

আকস্মিক বৃক্ক বিকল হওয়ার কারণ:

১.কিছু কিছু ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।

২. মারাত্মক ডায়রিয়া।

৩. কোন কারণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ ইত্যাদি।

বৃক্ক বিকল হবার সাধারণ কারণ:

১.নেফ্রাইটিস হবার কারণে।

২. ডায়াবেটিস হলে।

৩. উচ্চ রক্তচাপ সবসময় থাকলে।

৪. কিডনিতে পাথর হলে।

বৃক্ক বিকল এর চিকিৎসা:

বৃক্ক বিকল হলে এর দুটি চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে। যথা- ডায়ালাইসিস ও বৃক্ক প্রতিস্থাপন।

ডায়ালাইসিস:

বৃক্ক অসম্পূর্ণ অকেজো বা বিকল হলে বৈজ্ঞানিক উপায়ে কৃত্রিম প্রক্রিয়ায় রক্ত হতে  বর্জ্য পদার্থ ও অপ্রয়োজনীয়’ পানি অপসারণ করাকে ডায়ালাইসিস বলে।

ডায়ালাইসিস মেশিন:

যে মেশিনের সাহায্যে রক্ত পরিশোধিত করা হয় তাকে ডায়ালাইসিস মেশিন বলে।

 ডায়ালাইসিস পদ্ধতি:

ডায়ালইসিস-পদ্ধতি

ডায়ালইসিস-পদ্ধতি

ডায়ালাইসিস মেশিনের সাহায্যে রক্ত পরিশোধিত করা হয়। এই মেশিনের ডায়ালাইসিস টিউবটির আক্রান্ত রোগীর হাতের কব্জির এবং অন্য প্রান্ত ঐ হাতের কব্জির সংযোজন করা হয়। ধমনী থেকে রক্ত ডায়ালাইসিস টিউবের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত করানো হয়। এর প্রাচীর আংশিক বৈষম্যভেদ্য হওয়ায়  ইউরিয়া, ইউরিক এসিড এবং অন্যান্য ক্ষতিকর পদার্থ বাইরে বেরিয়ে আসে। পরিশোধিত রক্ত রোগীর দেহের  শিরার মধ্য দিয়ে দেহের ভিতর পুনরায় প্রবেশ করে। ডায়ালাইসিস টিউবটি এমন একটি তরলের মধ্যে ডোবানো থাকে যার গঠন রক্তের প্লাজমা রক্তরসের মতো। এভাবে ডায়ালাইসিস মেশিনের সাহায্যে নাইট্রোজেনঘটিত ক্ষতিকর বর্জ্যপদার্থ বাইরে নিষ্কাশিত হয়। তবে এটি একটি ব্যয়বহুল এবং সময় সাপেক্ষে প্রক্রিয়া।

বৃক্ক প্রতিস্থাপন:

যখন কোন ব্যক্তি কিডনি বিকল বা অকেজো হয়ে পড়ে তখন কোন অসুস্থ ব্যক্তির কিডনি তার দেহেপ্রতিস্থাপন করাকে কিডনি বা বৃক্ক প্রতিস্থাপন বলে।

i) কোনো নিকট আত্মীয়ের কিডনি রোগীর দেহে প্রতিস্থাপন।

ii) মৃত ব্যক্তি কে রোগীর দেহে প্রতিস্থাপন মৃত ব্যক্তি বলতে ”ব্রেন ডেড “মানুষকে বোঝায়।

 পৃথিবীতে লক্ষ লক্ষ কিডনি অকেজো রোগীর কিডনি সংযোজনের মাধ্যমে সুস্থভাবে জীবন যাপন করছে। একটি কিডনি কর্মক্ষম থাকলে সেটি দিয়ে সুস্থ ভাবে জীবন ধারণ করা সম্ভব, একটি সুস্থ কিডনি প্রতিস্থাপন করে রোগের চিকিৎসা করা যায়। তবে দেখতে হবে যে টিস্যু ম্যাচ করে কি না। পিতামাতা, ভাই বোন এবং নিকট আত্মীয়ের কিডনির টিস্যু ম্যাচ হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।

মূত্রনালীর রোগ হবার কারন:

১.অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন।

২. দৈনিক অপর্যাপ্ত পানি পান।

৩. শিশুদের টনসিল, খোসপাঁচড়া হওয়া।

৪. ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ।

৫. ডায়রিয়া ও রক্তক্ষরণ।

বৃক্ক ও মূত্রনালীর রোগ হতে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা:

১.ডায়রিয়া ও বমি ছাড়া অন্য কোন কারণে ( যেমন- ঘেমে যাওয়া, ক্লান্ত লাগা ইত্যাদি) খাবার স্যালাইন পান না করা।

২. ডায়রিয়া বা বমি হলেও বয়স্ক মানুষদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ মতে সঠিক ও পরিমিত পরিমাণে স্যালাইন দেয়া।

৩. সাধারণ ক্লান্তি বা ঘামের ক্ষেত্রে লেবুর রস এবং সামান্য লবণমিশ্রিত শরবতই যথেষ্ট। ডায়াবেটিকস না থাকলে এই ধরনের শরবত এর সাথে কিছুটা তিনি যোগ করা যেতে পারে।

মূত্রনালীর সুস্থ রাখার উপায় বা পরামর্শ:

*শিশুদের টনসিল এবং খোস পাঁচটা থেকে সাবধান হওয়া  কেননা সেখানে হতে কিডনির অসুস্থ হতে পারে।

* বয়স্কদের ডায়াবেটিস উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা। কেননা এই রোগগুলো বৃক্ক বিকল করতে পারে।

* ডায়রিয়া ও রক্তক্ষরণ ইত্যাদি দ্রুত চিকিৎসা করা। কারণ এই রোগে প্রাদুর্ভাব অনেকক্ষেত্রেই বৃক্ক বিকল করে দেয়।

* ধূমপান ত্যাগ করা ও ব্যথা নিরাময়ের  ঔষধ যথাসম্ভব পরিহার করা।

* পরিমাণমত পানি পান করা ও নিয়ম মেনে জীবন যাপন করা।

এ অধ্যায়ের অন্যান্য পাঠসমূহঃ

> রেচনের প্রাথমিক ধারনা ও বৃক্কের গঠন

> নেফ্রন এর গঠন ও বৃক্কের কাজ 

>অসমোরেগুলেশন ও বৃ্ক্কে পাথর