খাদ্য উপাদান

খাদ্য-উপাদান

খাদ্য উপাদান

খাদ্য যে সকল রাসায়নিক বস্তুর সমন্বয়ে গঠিত তাদেরকে খাদ্য উপাদান বলে। খাদ্য উপাদান গুলোর মধ্যে পুষ্টি থাকে তাই খাদ্য উপাদান কে পুষ্টি উপাদান বলা হয় । উপাদান অনুযায়ী খাদ্যবস্তুকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

১) আমিষ

২) শর্করা

৩) স্নেহ ও চর্বিজাতীয় খাদ্য

এছাড়াও আরও তিন ধরনের উপাদান ও দেহের জন্য প্রয়োজন । যথা –

৪)  খাদ্যপ্রাণ বা ভিটামিন

৫)  খনিজ লবণ

৬)  পানি

উপরের খাদ্য উপাদান এর বাইরে আরও একটি উপাদান রয়েছে যেটি কোন পুষ্টি না যোগালেও একটি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উপাদান।

৭)  খাদ্যআঁশ  বা রাফেজ

খাদ্য

যেসব জৈব উপাদান জীবদেহের গঠন, ক্ষয়পূরণ এবং শক্তি উৎপাদনে ব্যবহৃত হয় সেগুলো কে খাদ্য বলে।

পুষ্টি

 খাদ্য উপাদান যে প্রক্রিয়ায় শরীরের তাপ ও শক্তি যোগায়,  দেহের গঠন, বৃদ্ধি ও ক্ষয় পূরণ করে এবং শরীরকে সবল ও রোগমুক্ত রেখে কর্ম জীবন যাপনের সহায়তা করে তাকেই পুষ্টি বলে। 


১)আমিষ বা প্রোটিন

 কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন এবং নাইট্রোজেন দিয়ে গঠিত যে সকল খাদ্য উপাদান জীবদেহের বৃদ্ধি সাধন এবং ক্ষয় পূরণ করে তাদেরকে আমিষ বলে। আমিষে ১৬ ভাগ নাইট্রোজেন ও সামান্য পরিমাণে সালফার, ফসফরাস ও আয়রন থাকায় এর গুরুত্ব পুষ্টিবিজ্ঞানে অনেক বেশি। 

আমিষের উৎস

 মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ডাল, শিমের বিচি, শুটকি মাছ, চিনাবাদাম ইত্যাদি ।

আমিষের প্রকারভেদ

উৎস অনুযায়ী আমিষ দুই ধরনের।  যথা-

১)  প্রাণীজ আমিষ

যেসকল আমিষ প্রাণীদেহে থেকে পাওয়া যায় তাদেরকে প্রাণিজ আমিষ বলে।  যেমন- মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, কলিজা, ছানা, পনির ইত্যাদি।

২)  উদ্ভিজ্জ আমিষ

যে সকল আমিষ উদ্ভিদ থেকে পাওয়া যায় তাদেরকে উদ্ভিজ্জ আমিষ বলে। যেমন- ডাল, শিমের বিচি,  চিনাবাদাম ইত্যাদি।

আমিষের কাজ

# দেহের বৃদ্ধি সাধন ও ক্ষয় পূরণ করা

#  কোষ গঠন ও তাপ শক্তি উৎপাদন করা

#  জীব দেহের প্রয়োজনীয় অ্যামাইনো এসিড এর চাহিদা পূরণ করা

# দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা

# দেহের জন্য প্রয়োজনীয় উৎসেচক, হরমোন ইত্যাদি সৃষ্টি করা

# শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়া সহায়তা করে।

২) শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট

 কার্বন, হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন দিয়ে গঠিত যে সকল খাদ্য উপাদান দেহের শক্তি উৎপাদনে সহায়তা করে এবং শরীরে কাজ করার শক্তি যোগায় তাকে শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট বলে।  মূল, কান্ড, পাতা, ফুল ও বীজে শর্করা বিভিন্ন রূপে জমা থাকে ।

শর্করার উৎস

 ফলের রস, গম, আলু, চাল, চিনি, আটা ইত্যাদি।

শর্করার প্রকারভেদ

গঠন পদ্ধতি অনুসারে সরকারকে তিন ভাগে ভাগ করা যায় । যেমন-

১) এক শর্করা

একটি মনোমার বিশিষ্ট শর্করাকে একশোর করা বলে।  যেমন- মধু, ফলের রস এতে শর্করা গ্লুকোজ রূপে অবস্থান করে ।

২) দ্বি শর্করা

দুটি মনোমার বিশিষ্ট শর্করাকে দ্বি শর্করা বলে । যেমন- চিনি,  দুধ- এতে শর্করা শুক্রজ ও ল্যাকটোজ রূপে অবস্থান করে।

৩) বহু শর্করা

বহু মনোমার বিশিষ্ট শর্করাকে বহু শর্করা বলে। যেমন- চাল, আটা, আলু, সবুজ শাকসবজি- এতে শর্করা শ্বেতসার বা গ্লাইকোজেন রূপে অবস্থান করে ।

শর্করার কাজ

#  দেহে শক্তি উৎপাদনে সহায়তা করে

#  দেহের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে

# সেলুলোজ জাতীয় খাদ্য কোষ্ঠবদ্ধতা দূর করে

# রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ স্বাভাবিক রাখে। 



৩) স্নেহ বা চর্বিজাতীয় খাদ্য

 কার্বন, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন দিয়ে তৈরি যে সকল খাদ্য উপাদান দেহে তাপ ও শক্তি উৎপাদন করে তাদেরকে স্নেহ ও চর্বি জাতীয় খাদ্য বলে ।এই উপাদানটি পাকস্থলীতে অনেকক্ষণ থাকে ।তাই তখন ক্ষুধা পায় না ।দেহের ত্বকের নিচে চর্বি জমা থাকে। 

স্নেহ বা চর্বি জাতীয় খাদ্যের উৎস

তেল, ঘি, মাখন ইত্যাদি, তবে যকৃৎ, মস্তিষ্ক ও মাংস পেশিতে চর্বি জমা থাকে।

স্নেহ ও চর্বি জাতীয় খাদ্যের প্রকারভেদ

উৎস অনুযায়ী স্নেহপদার্থ দুই ধরনের- যথা-

১)  উদ্ভিদ স্নেহ পদার্থ

যেসকল স্নেহপদার্থ উৎস উদ্ভিদ তাদেরকে উদ্ভিজ্জ স্নেহপদার্থ বলে ।যেমন- সয়াবিন,  সরিষা, তিল, বাদাম, সূর্যমুখী এবং ভুট্টার তেল। 

২) প্রাণিজ স্নেহ পদার্থ

যেসকল স্নেহপদার্থ উৎস প্রাণী তাদেরকে প্রাণিজ স্নেহপদার্থ বলে। যেমন-চর্বি, ঘি, ডালডা, বা মাখন ইত্যাদি। ডিমের কুসুমের স্নেহপদার্থ রয়েছে। 

স্নেহ ও চর্বি জাতীয় খাদ্যের কাজ

# দেহে তাপ ও শক্তি উৎপাদন করা। 

# প্রাণী দেহের তাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা।

# চর্বি মেদ রূপে ভবিষ্যতে বা উপবাসে খাদ্যের উৎস হিসেবে সঞ্চিত থাকে।

# দেহের ত্বককে মসৃণ রাখে।

# চর্বি A,D,E,Kভিটামিন কে দ্রবীভূত রাখে ও এদেরকে শোষণে সাহায্য করে।

# কোলেস্টেরল নামক ফ্ল্যাট থেকে ভিটামিন ডি, ইস্ট্রোজেন, টেস্টোস্টেরন নামক হরমোন উৎপাদন করে।

 

এ অধ্যায়ের অন্যান্য পাঠ-

# উদ্ভিদের পুষ্টিতে বিভিন্ন খনিজ উপাদানের ভূমিকা

Rabaya Bashri: Rabaya Bashri is a Lecturer with 14 years of teaching experience in biological science. Just after complete her M.Sc (Botany) she joined teaching profession. Having First Class all through her educational life she never seek for other job. She served most renowned school and colleges in Dhaka and Narayangonj city.