কোষঝিল্লির গঠন ও কাজ

কোষ প্রাচীরের ঠিক নিচে প্রোটোপ্লাজম কে ঘিরে দুই স্তরের যে স্থিতিস্থাপক সজীব পর্দা রয়েছে তাকে  কোষ ঝিল্লি বলে। বিজ্ঞানী নাগেলি কোষ ঝিল্লি নামকরণ করেন । কোষ ঝিল্লির ভাজকে মাইক্রোভিলাই বলে। কোষঝিল্লির গঠন সম্পর্কিত অন্যতম মডেল হল স্যান্ডউইচ মডেল ও ফ্লুইড মোজাইক মডেল ।

স্যান্ডউইচ মডেলঃ

ড্যানিয়েলি ও ডেসবন ১৯৪৩ সালে সর্বপ্রথম একটি সুর্নিষ্ট মডেল প্রস্তাব করেন কোষ ঝিল্লির মডেলের জন্য। এই মডেলকে বলা হয় স্যান্ডউইচ মডেল। এই মডেল অনুযায়ী কোষ ঝিল্লি দ্বিস্তর বিশিষ্ট এবং প্রতিস্তরে প্রটিন ও লিপিডের উপস্তর রয়েছে। দ্বি-স্তর বিশিষ্ট ঝিল্লির উপরে ও নিচে প্রোটিনের স্তর এবং মাঝখানে রয়েছে লিপিডের স্তর যার গঠন স্যান্ডউইচের মতো তাই এই মডেলকে স্যান্ডউইচ মডেল বলা হয়। 

কোষ ঝিল্লির স্যান্ডউইচ মডেল

কোষ ঝিল্লির স্যান্ডউইচ মডেল

ফ্লুইড মোজাইক মডেলঃ

কোষ ঝিল্লির সকল মডেলের মধ্যে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য হবে ফ্লুইড মোজাইক মডেল।

১৯৭২ সালে জে এস সি্ঙ্গার এবং জে এল নিকলসন ফ্লুইড মোজাইক মডেল প্রবর্তন করেন। এই মডেলে অনুযায়ী কোষ ঝিল্লির গাঠনিক উপাদান হল-

 

লিপিড বাইলেয়ারঃ

কোষঝিল্লি দ্বিস্তর বা লেয়ার বিশিষ্ট, প্রতিটি লেয়ার ফসফোলিপিড দিয়ে গঠিত। প্রতিটি ফসফোলিপিড এক অনু গ্লিসারল ও দুটি নন পোলার ফ্যাটি এসিড লেজ এবং একটি পোলার ফসফেট মাথা থাকে। উভয় স্তরে হাইড্রোকার্বন লেজটি  মুখোমুখি থাকে এবং পোলার ফসফেট মাথা বিপরিত দিকে থাকে।



মেমব্রেন প্রোটিনঃ

কোষ ঝিল্লিতে তিন ধরনের প্রোটিন রয়েছে যথা-

১. ইনটিগ্রাল প্রোটিন

২. পেরিফেরাল প্রোটিন

৩. লিপিড সম্পৃ্ক্ত প্রোটিন

এই প্রোটিনগুলো কোষঝিল্লির উভয় সার্ফেসে থাকে।

কোষঝিল্লির ফ্লুইড মোজাইক মডেল

কোষঝিল্লির ফ্লুইড মোজাইক মডেল

গ্লাইকোক্যালিক্সঃ

কোষ ঝিল্লির উপর বিশেষ ধরনের চিনির স্তরকে গ্লাইকোক্যালিক্স বলে। গ্লাইকো প্রোটিন ও গ্লাইকো লিপিডকে মিলিতভাবে গ্লাইকোক্যালিক্স বলে।

কোলেস্টেরলঃ

ফসফোলিপিড অণুর ফাঁকে ফাঁকে কোলেস্টেরল অণু থাকে। প্রানী কোষের ঝিল্লিতে এটি অপেক্ষাকৃত বেশি থাকে।



কোষঝিল্লির কাজঃ

১. কোষঝিল্লি কোষের সব বস্তুকে ঘিরে রাখে।

২. বাইরের প্রতিকুল অবস্থা হতে অভ্যন্তরীন বস্তুকে রক্ষা করে।

৩. বিভিন্ন বস্তুর স্থানান্তর কোষঝিল্লির মধ্যে দিয়ে হয়।

৪. এটি একটি কাঠামো হিসেবে কাজ করে যার মধ্যে এনজাইম থাকে।

৫. বিভিন্ন বৃহদানু সংশ্লেষন করে।

৬. পারস্পরিক বন্ধন, বৃদ্ধি ও চলন ইত্যাদি কাজেও এর ভূমিকা আছে।

৭. বিভিন্ন রকম তথ্যের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।

৮. অভিস্রাবনের মাধ্যমে পানি ও খনিজ লবন চলাচল নিয়ন্ত্রন করে।

৯. পাশাপাশি কোষগুলো পরস্পর থেকে পৃথক রাখে।