উদ্ভিদজগতের শ্রেণিবিন্যাস

১. শ্রেণিবিন্যাসের ধাপগুলো হচ্ছে:

Kingdom > Division/Phylum > Class > Order > Family > Genus > Species

২. ICBN স্বীকৃত সমাপ্তিজ্ঞাপক বর্ণমালা:

Kingdom/ Division – “phyta”

Class – “opsida”

Order – “ales”

Family – “aceae”

৩. ক্যারোলাস লিনিয়াস ১৭৫৩ সালে Species Plantarum গ্রন্থটি প্রণয়ন করেন।

( সালটা ডিএনএ হেলিক্সের গঠন ওয়াটসন ও ক্রীকের আবিষ্কারের সনের সাথে মিলে যায়, ১৯৫৩ সাল। আর Historia Plantarum লেখেন History-এর অনেক আগের থিওফ্রাস্টাস। এই কনফিউশনটা যেন না থাকে।)



৪. থিওফ্রাস্টাস কে উদ্ভিদবিজ্ঞানের জনক বলা হয়। তিনিই উদ্ভিদসমূহকে বৃক্ষ, উপগুল্ম, গুল্ম, বীরুৎ এই চার শ্রেণিতে ভাগ করেন।

৫. Historia Plantarum গ্রন্থে ৪৮০ টি উদ্ভিদের বর্ণনা ছিল।

৬. দ্বিপদ নামকরণ লেখার অক্ষরবিন্যাস ইটালিক, কিন্তু ভাষা ল্যাটিন।

৭. “জন রে” Dicot আর Monocot উদ্ভিদ দুই ভাগে প্রথম ভাগ করেন যা পরে বেন্থাম-হুকারের শ্রেণিবিন্যাসে জায়গা করে নেয়।

৮. উদ্ভিদ জগতকে অপুস্পক (Imperfecti) এবং পুস্পক (perfecti) এ দুই ভাগে বিভক্ত করেন জোসেফ পিটন দি টুর্নেফোর্ট

৯. ভারতবর্ষের লিনিয়াস বলা হয় উইলিয়াম রক্সবার্গ কে।

১০. ক্যারোলাস লিনিয়াস কে আধুনিক শ্রেণিকরণবিদ্যার জনক বলা হয়। তার Species Palntarum বই-এ ৭৩০০ প্রকারের উদ্ভিদের বর্ণনা ছিল। লিঙ্গভিত্তিক কৃত্রিম শ্রেণিবিন্যাস পদ্ধতি তিনি প্রণয়ন করেন।

১১. মাইকেল অ্যাডনসন সর্বপ্রথম কৃত্রিম শ্রেণিবিন্যাস পদ্ধতির ধারণা বাতিল করে প্রাকৃতিক শ্রেণিবিন্যাস পদ্ধতির শুরু করেন।

১২. বেন্থাম ও হুকারের শ্রেণিবিন্যাস পদ্ধতি Genera Plantarum বই-এ প্রকাশ করেন। এটিই সর্বশেষ প্রাচীন প্রাকৃতিক শ্রেণিবিন্যাস পদ্ধতি

১৩. এভুলেশন বা বিবর্তনের তত্ত্ব অনুসারে করা প্রথম জাতিজনি শ্রেণিবিন্যাস এঙ্গলার-প্রান্টলের শ্রেণিবিন্যাস পদ্ধতি।

১৪. উদ্ভিদজগতের শ্রেণিবিন্যাস তিন পদ্ধতিতে করা হয়, কৃত্রিম, প্রাকৃতিক ও জাতিজনি (Phylogenetic) শ্রেণিবিন্যাস পদ্ধতি

    • থিওফ্রাস্টাস থেকে শুরু করে লিনিয়াস পর্যন্ত কৃত্রিম শ্রেণিবিন্যাস।
    • মাইকেল অ্যাডানসন থেকে বেন্থাম হুকার – প্রাকৃতিক শ্রেণিবিন্যাস।
    • এঙ্গলার-প্রান্টল থেকে জাতিজনি শ্রেণিবিন্যাস পদ্ধতি শুরু ও বর্তমানে গৃহীত।

১৫. সরিষা, গম, এরা বর্ষজীবী বীরুৎ।

বাঁধাকপি, মূলা দ্বিবর্ষজীবী বীরুৎ। প্রধানত শীতকালীন সবজি।

বহুবর্ষজীবী বীরুৎ-এর উদাহরণ: হলুদ গাছ, দুর্বাঘাস।

কল্কাসুন্দা = উপগুল্ম

গুল্ম = কাগজিলেবু, জবা

বৃক্ষ = অন্যান্য সকল বড় বড় গাছ।

১৬. বেন্থাম ও হুকার দুইটি উপজগতে সমস্ত উদ্ভিদজগতকে ভাগ করেন: বীজহীন অপুষ্পক আর সবীজ পুষ্পক। (জোসেফ পিটন করেন অপুষ্পক ও পুষ্পক)


১৭. অপুষ্পক উদ্ভিদ তিন ভাগে: থ্যালোফাইটা, ব্রায়োফাইটা, টেরিডোফাইটা

পুষ্পক উদ্ভিদ দুইভাগে: নগ্নবীজি ও আবৃতবীজী

১৮. থ্যালোফাইটায় মূল, কাণ্ড, পাতা নেই, সব প্রায় একই রকম, এজন্যই সমাঙ্গবর্ণ বলা হয়। গাছের মত একটা আকৃতি এদের থাকে না, যেমনটা অন্যদের থাকে।

১৯. ব্রায়োফাইটায় পাতা ও কাণ্ড থাকে, তবে মূল না থেকে রাইজয়েড থাকে। এটাই টেরিডোফাইটার সাথে এদের পার্থক্য।

২০. টেরিডোফাইটায় মূল, কাণ্ড ও পাতা আছে, পরিবহণ টিস্যুতন্ত্রও আছে। ফার্ন জাতীয় উদ্ভিদ।

২১. গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ:

    • শৈবাল = spirogyra, volvox, polysiphonia
    • ছত্রাক = Mucor, Agaricus, Penicillium
    • ব্রায়োফাইটা = Riccia, Marchantia, Bryum,
    • টেরিডোফাইটা = Pteris, Dryopteris

২২. প্রজাতির সংখ্যা:

    • থ্যালোফাইটা = ১,১০,০০০ টি
    • ব্রায়োফাইটা = ২৩,০০০ টি
    • টেরিডোফাইটা = ১০,০০০ টি

২৩. জিমনোস্পার্মি নগ্নবীজী আর অ্যাঞ্জিওস্পার্মি আবৃতজীবী।

এখানে একটা কনফিউশন হতে পারে যে জিমনোস্পার্মি একটা পজিটিভ শব্দ মনে হয় আর অ্যানজিওস্পার্মি শব্দে কোন কিছুর অভাব বোঝাতে যেন শুরতে a ব্যবহৃত হয়েছে। কিন্তু জিমনোস্পার্মি কথাটা গ্রিক ভাষা থেকে আসা, যার অর্থই “নগ্ন বীজ”, আর অ্যানজিওস্পার্মি কথাটা অন্যভাবে এসেছে, পাতায় যে সমান্তরাল বা জালের মত শিরা দেখা যায়, ওটার সাথে সম্পর্ক যুক্ত, কিন্তু নগ্নবীজীতে পাতা কাটা কাটা থাকে।

২৪. জিমনোস্পার্মি অনেক কম, আস্তে আস্তে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে, প্রায় ৭০০।

২৫. ডাইকটিলিডনি এর “ডাই” অংশটা বোঝায় দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদ, আর মনোকটিলিডনের “মনো” অংশটা বোঝায় একবীজপত্রী।

দ্বিবীজপত্রী আম গাছ আর একবীজপত্রী ধান গাছকে ভেবে পার্থক্য করলেই কিছু মৌলিক পার্থক্য সহজে মনে থাকবে। ধান পাছের পাতায় যেমন একটা সমান্তরাল শিরাবিন্যাস থাকে, কিন্তু আম গাছের পাতায় জালিকাকার শিরাবিন্যাস থাকে। ধান গাছের মূল ছোট, অস্থানিক, কিন্তু আম গাছের মূল অনেক শক্তিশালী, প্রধান মূলতন্ত্র বিদ্যমান।

২৬. সপুষ্পক উদ্ভিদের সর্বাধুনিক শ্রেণিবিন্যাস পদ্ধতি গণ্য করা হয় ড. আরমেন তাখতাজান-এর শ্রেণিবিন্যাস পদ্ধতি।

২৭. মারগুলিস সমগ্র জীবজগতকে দুইটি সুপার কিংডম-এর আওতায় পাঁচটি জগত বা কিংডম-এ ভাগ করেন। যথা:

  ক. প্রোক্যারিওটা বা আদিকোষী 

            খ. ইউক্যারিওটা বা প্রকৃতকোষী

২৮. প্রোক্যারিওটের কোষের ভিতরে কোন অঙ্গাণু থাকে না, শুধুমাত্র নিউক্লিয়ার পদার্থ অর্থাৎ ডিএনএ থাকে আর রাইবোজোম থাকে যার ফলে ডিএনএ থেকে প্রোটিন তৈরি হতে পারে।

২৯. প্রোক্যারিওটে অ্যামাইটোসিস প্রক্রিয়ায় এদের কোষ বিভাজন ঘটে, যেখানে ইউক্যারিওটে মাইটোসিস ও মিয়োসিস প্রক্রিয়া বিরাজমান।

৩০. প্রোক্যারিওটে বংশবৃদ্ধি হয় দ্বিবিভাজন প্রক্রিয়ায়

৩১. প্রোটকটিস্টা এককোষী বা বহুকোষী, এদের নিউক্লিয়াসসহ অন্যান্য অঙ্গাণু আছে। তবে এরা অনুন্নত, তাই ভ্রূণ নেই, কনজেগুশনের মাধ্যমে প্রজনন ঘটে।

৩২. অ্যামিবা, শৈবাল প্রোটকটিস্টার অন্তর্ভুক্ত

৩৩. প্রোটকটিস্টায় সালোকসংশ্লেষণকারী রঞ্জক পদার্থ থাকতে পারে, কিন্তু ফানজাই তে অবশ্যই থাকে না।

৩৪. ফানজাই-এর কোষপ্রাচীর “কাইটিন” দ্বারা নির্মিত।

৩৫. প্রোটকটিস্টা যেমন কনজেগুশন প্রক্রিয়ায় প্রজনন করতো, তেমনি ফানজাই তে হ্যাপ্লয়েড স্পোরের মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি ঘটে।



৩৬. Saccharomyces cerevisiae বা ঈস্ট একটা গুরুত্বপূর্ণ ফানজাই, এছাড়াও Mucor, Agaricur  গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ ফানজাই-এর।

৩৭. প্ল্যান্টির কোষপ্রাচীর সেলুলোজ নির্মিত। সেলুলোজ একটি শর্করা, গ্লুকোজের অনেক গুলো অণু নিয়ে গঠিত পলিমার।

৩৮. ব্রায়োফাইটা গ্যামেটোফাইট এবং  ট্র্যাকিওফাইটা স্পোরোফাইটিক।

৩৯. ব্রায়োফাইটায় তিনটা ফাইলাম আর ট্র্যাকিওফাইটায় আটটা ফাইলাম।

৪০. ব্রায়োফাইটায় পরিবহন তন্ত্র নেই, কিন্তু ট্র্যাকিওফাইটায় পরিবহনতন্ত্র আছে। (পরিবহন টিস্যুতন্ত্রে ট্রাকিয়া আছে, এভাবে মনে রাখা যায় যে ট্র্যাকিওফাইটায় পরিবহনতন্ত্র আছে।)

৪১. প্রোক্যারিয়টে রাইবোসোম ক্ষুদ্র, শুধুমাত্র 70S। কিন্তু উন্নততর ইউক্যারিওটে 70S এবং 80S দুটোই রয়েছে।

৪২. প্রোক্যারিওটে DNA বৃত্তাকার ও ইউক্যারিয়টে লম্বাকার

৪৩. অপেরন প্রোক্যারিওটে আছে, কারণ এটা একটা বিশেষ মেকানিজম যেটা ছোট জিনোমের জন্য লাগে। ইউক্যারিওটের জিনোম অনেক বড়, তাই অপেরন লাগে না।

শ্রেনীবিন্যাস সম্পর্কে  আরও বিস্তারিত জানার জন্য সহায়ক পোষ্ট – জীবের শ্রেণীবিন্যাস