এ পাঠে যা রয়েছে-
বিভিন্ন ধরন রক্ত কণিকার তুলনা / পার্থক্য
১. নিউক্লিয়াস
লোহিত রক্তকণিকা ও অনুচক্রিকার নিউক্লিয়াস নেই কিন্তু শ্বেত রক্তকণিকায় নিউক্লিয়াস আছে।
২. আকার
লোহিত রক্তকণিকা বৃত্তের মতো গোলাকার বা দ্বিঅবতল , কিন্তু শ্বেত রক্তকণিকা অনিয়মিত আকারের। অপরদিকে অনুচক্রিকা গোলাকার ডিম্বাকার ও রডের মত।
৩. সংখ্যা
লোহিত রক্ত কণিকার সংখ্যা মানবদেহের সবচেয়ে বেশি, প্রতি কিউবিক মিলি মিটারে প্রায় 50 লক্ষ। কিন্তু শ্বেত রক্ত কণিকার সংখ্যা অনেক কম প্রতি কিউবিক মিলিমিটার 4-10 হাজার । অপরদিকে অনুচক্রিকার সংখ্যা শ্বেত রক্তকণিকার তুলনায় বেশি তবে লোহিত রক্তকণিকার তুলনায় কম প্রতি কিউবিক মিটারে প্রায় 2.5 লাখ ।
৪. হিমোগ্লোবিন
লোহিত রক্ত কণিকায় হিমোগ্লোবিন নামক এক ধরনের রঞ্জক পদার্থ আছে । কিন্তু শ্বেত রক্তকণিকা ও অনুচক্রিকার হিমোগ্লোবিন নেই।
৫.আয়ু
লোহিত কণিকার গড় আয়ু 120 দিন। কিন্তু শ্বেত রক্তকণিকার গড় আয়ু 1 থেকে 15 দিন। অন্যদিকে অনুচক্রিকার গড় আয়ু 5 থেকে 10 দিন।
৬. কাজ
লোহিত কণিকা অক্সিজেন ও কার্বন ডাই অক্সাইড পরিবহন করে। কিন্তু শ্বেত রক্তকণিকা জীবাণু ধ্বংসে অংশ নেয়। অপরদিকে অনুচক্রিকা ক্ষতস্থানের রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে।
রক্তের কাজ
১. অক্সিজেন পরিবহনে
লোহিত রক্তকণিকা অক্সিহিমোগ্লোবিন রূপে কোষে কোষে অক্সিজেন পরিবহন করে। অক্সিজেন ছাড়া কোন জীব বাঁচতে পারে না এবং কেবল রক্তে অক্সিজেন পরিবহনে সক্ষম।
২. কার্বন-ডাই-অক্সাইড অপসারনে
মানব দেহের কোষগুলোতে রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে যে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের সৃষ্টি হয় তা রক্ত রস সোডিয়াম বাই কার্বনেট রূপে সংগ্রহ করে নিঃশ্বাসের সাথে দেহ থেকে বের করে দেয়।
৩. খাদ্যসার পরিবহনে
রক্ত রস খাদ্যের পরিপাক অংশ তথা খাদ্যসার যেমন গ্লুকোজ, অ্যামাইনো এসিড, চর্বিকনা ইত্যাদি কোষে সরবরাহ করে।
৪. বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাশন
রক্ত দেহের প্রতিটি কোষে দেহের জন্য ক্ষতিকর বর্জ্য পদার্থ বহন করে এবং বিভিন্ন অঙ্গের মাধ্যমে সেসব ইউরিয়া ইউরিক এসিড ও কার্বন-ডাই-অক্সাইড হিসেবে নিষ্কাশন করে।
৫. রক্ত জমাট বাঁধা
দেহের কোন অংশ কেটে গেলে অনুচক্রিকা রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে এবং দেহের রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৬. রোগ প্রতিরোধে
এন্টিবডি ও এন্টিজেন উৎপাদনের মাধ্যমে রক্ত দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
৭. জীবাণু ধ্বংসে
কয়েক প্রকারের শ্বেতকনিকা ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় দেহকে জীবাণুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
৮. হরমোন পরিবহনে
মানবদেহে হরমোন সরাসরি রক্তে মিশে প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন অঙ্গের সঞ্চালিত হয় এবং বিভিন্ন ধরনের জৈবিক কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৯. তাপের সমতা রক্ষায়
উষ্ণ রক্তবাহী প্রাণীর দেহে রক্ত তাপমাত্রার ভারসাম্য রক্ষা করে।
১০. পানির ভারসাম্য রক্ষায়
রক্ত ধমনী, শিরা ও কৌশিক নালীর মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় মানবদেহে পানির ভারসাম্য রক্ষা করে।
শ্বেত রক্তকণিকাকে দেহের প্রহরী কোষ বলা হয় কেন?
মানবদেহে কোন রোগ জীবাণু প্রবেশ করলে কয়েক প্রকারের শ্বেত কণিকা সেই জীবাণুকে ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় মেরে ফেলে বা ভক্ষণ করে ফেলে রোগের প্রতিরোধ ঘটায় এবং অ্যান্টিবডি উৎপাদনের মাধ্যমে দেহের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তাই শ্বেত রক্তকণিকাকে দেহের প্রহরী বলা হয়।
লসিকা
রক্তের কিছু উপাদান কৌশিক জালিকার প্রাচীর ভেদ করে কোষের চারপাশে অবস্থান করে এই উপাদান গুলোকে সম্মিলিত ভাবে লসিকা বলে।
এ অধ্যায়ের অন্যান্য পাঠসমূহ-
# জীবে পরিবহন- ব্যাপন, অভিস্রবন ও ইমবাইবিশন