নিউরনের গঠন ও কাজ – স্নায়ুতন্ত্রের গঠন ও কার্যকরী একক কে নিউরন বলে।

স্নায়ু কলা

যে সকল কলা বা টিস্যু দেহের সব ধরনের সংবেদন এবং উদ্দীপনা গ্রহণ করে এবং তা পরিবহনের মাধ্যমে উদ্দীপনা অনুসারে উপযুক্ত প্রতিবেদন সৃষ্টি করে তাদেরকে স্নায়ু টিস্যু বা স্নায়ু কলা বলে। বহুসংখ্যক স্নায়ু কোষ বা নিউরনের সমন্বয়ে গঠিত।

নিউরনের গঠন

প্রতিটি নিউরন দুটি অংশ নিয়ে গঠিত- যথা কোষদেহ এবং প্রলম্বিত অংশ। একটি আদর্শ নিউরনের তিনটি অংশ থাকে।  যথা:-

  •  কোষদেহ
  •  ডেনড্রাইট
  •  অ্যাকশন                                                                                                                    

কোষদেহ

প্লাজমামেমব্রেন, সাইটোপ্লাজম আর নিউক্লিয়াস নিয়ে গঠিত নিউরনের গোলাকার, তারকাকার অথবা ডিম্বাকার অংশ কোষদেহ নামে পরিচিত। এখানে  সাইটোপ্লাজমে মাইট্রোকন্ডিয়া, লাইসোসোম, চর্বি, গ্লাইকোজেন সহ অসংখ্য  নিশল দানা থাকে।

ডেনড্রাইট

কোষ দেহের চারিদিকের শাখাযুক্ত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রলম্বিত অংশকে ডেনড্রন বলে।  ডেনড্রন থেকে যে শাখা বের হয় তাদের ডেনড্রাইট বলে। একটি নিউরনে ডেনড্রন সংখ্যা শূন্য থেকে শতাধিক পর্যন্ত হতে পারে। ডেনড্রাইট অন্য নিউরন হতে স্নায়ু তাড়না গ্রহণ করে।

এক্সন

নিউরনের কোষদেহ থেকে একটি লম্বা স্নায়ুতন্ত্র পরবর্তী নিউরনের ডেনড্রাইটের সাথে যুক্ত থাকে তাকে অ্যাকশন বলেএকটি নিউরনে একটিমাত্র অ্যাকশন থাকে। অ্যাকশনের চারদিকের পাতলা আবরণটি কে নিউরিলেমা বলে।  নিউরিলেমা এবং অ্যাকশন এর মধ্যবর্তী অঞ্চলে স্নেহ পদার্থের একটি স্তর থাকে একে মায়েলিন বলে।  নিউরিলেমার সাথে অ্যাকশন এর প্রত্যক্ষ সংস্পর্শ ঘটে আবরনহীন অংশগুলোতে এই অংশগুলোকে রানভিয়ারের পর্ব বলে।

নিউরনের গঠন ও কাজ 1
একটি নিউরন

 নিউরনের কাজ:

  • নিউরনের প্রধান কাজ উদ্দীপনা বহন করা।
  •  নিউরন স্মৃতি সংরক্ষণে ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  •  সংবেদী  নিউরন গ্রাহক অঙ্গ থেকে  কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র এবং  আজ্ঞাবাহী নিউরন কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র বা মস্তিষ্ক থেকে কার্যকরী অঙ্গে উদ্দীপনা প্রেরণ করে।

 সিনঅ্যাপস

পরপর দুইটি নিউরনের প্রথমটির অ্যাকশন এবং ডেনড্রাইট এর মধ্যে একটি স্নায়ু সন্ধি গঠিত হয়, একে  সিনঅ্যাপস বলে।

রানভিয়ারের পর্ব

নিউরনের অ্যাকশনের পাতলা পর্দা বা আবরণটি অবিচ্ছিন্ন নয়,  নির্দিষ্ট দূরত্ব পরপর একটি বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকে এবং এই বিচ্ছিন্ন আবরনহীন অংশগুলোকে  রানভিয়ারের পর্ব বলে।

অ্যাক্সলেমা

নিউরন এর মধ্যকার অ্যাকশনের মধ্যকার আবরণীকে অ্যাক্সলেমা বলে।

 নিউরন বিভাজিত হয় না কেন?

নিউরন স্নায়ুতন্ত্রের গাঠনিক একক। কোষদেহ, ডেনড্রাইট এবং অ্যাকশন এর সমন্বয়ে গঠিত নিউরনের সাইটোপ্লাজমে মাইটোকনড্রিয়া, গলগি বস্তু, রাইবোজোম, এন্ডোপ্লাজমিক জালিকা ইত্যাদি অঙ্গাণু থাকে। কিন্তু নিউরনের সাইটোপ্লাজমে কোন সক্রিয় সেন্ট্রিওল থাকে না তাই নিউরন বিভাজিত হয় না।

নিউরিলেমা

নিউরনের কোষদেহ হতে উৎপন্ন লম্বা তন্তু অ্যাকশন নামে পরিচিত। আর এই অ্যাকশনের চারিদিকে অবস্থিত  পাতলা আবরণটি হল নিউরিলেমা।

মায়োলিন

নিউরনের অ্যাকশন ও নিউরিলেমার মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত প্রোটিন ও ফ্যাট নির্মিত আবরণীকে মায়োলিন বলে।

ডোপামিন

স্নায়ু কোষ যে নির্যাস তৈরি করে তাকে বলা হয়  ডোপামিন। ডোপামিন শরীরের পেশির নড়াচড়ায় সাহায্য করে।  ডোপামিন বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে তৈরি। এর অভাব হলে বা এটি তৈরি না হলে মানুষ পারকিনসন রোগে আক্রান্ত হয়।

মেনিনজেস

অগ্রমস্তিষ্ক বা সেরিব্রাম কে একটি পাতলা পর্দা আবৃত করে রাখে, এই পাতলা পর্দা কে মেনিনজেস বলে।

সেরিব্রাম ও সেরিবেলাম এর মধ্যে পার্থক্য

সেরিব্রাম ও সেরিবেলাম এর মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ —- 

  • সেরিব্রাম অগ্র মস্তিষ্কের অংশ আর সেরিবেলাম পশ্চাৎ মস্তিষ্কের অংশ।
  •  মস্তিষ্কের অধিকাংশ অংশ জুড়ে সেরিব্রাম অবস্থিত। কিন্তু সেরিবেলাম  পন্সের পৃষ্ঠ ভাগে ও মধ্য মস্তিষ্কের নিচে ছোট অংশ জুড়ে অবস্থিত।
  •  সেরিব্রাম  অনৈচ্ছিক কাজ নিয়ন্ত্রনকারী এবং বুদ্ধি চিন্তা স্মৃতিবোধের কেন্দ্র আর সেরিবেলাম অনৈচ্ছিক কাজের সমন্বয়কারী ও দেহের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণকারী।

মেরুরজ্জু

করোটির পিছনে অবস্থিত ফোরামেন ম্যাগনাম নামক ছিদ্র  থেকে কটিদেশের কশেরুকা পর্যন্ত বিস্তৃত অংশকে মেরুরজ্জু বা সুষুম্নাকাণ্ড বলে।একটি মেরুদন্ডী কশেরুকার ভেতরের ছিদ্রপথে সুরক্ষিত থাকে। মেরুরজ্জু হতে ৩১ জোড়া মেরুরজ্জু স্নায়ু বের হয়।