এ পাঠে যা রয়েছে-
জীবে পরিবহন- ব্যাপন, অভিস্রবন ও ইমবাইবিশন
ফ্লুইড অফ লাইফ
পানির অপর নাম জীবন । প্রোটোপ্লাজম জীবদেহের ভৌত ভিত্তি। এ প্রোটোপ্লাজম এর শতকরা 90 ভাগই পানি। পানির পরিমাণ কমে গেলে প্রোটোপ্লাজম সংকুচিত হয়ে মরে যেতে পারে । এছাড়া উদ্ভিদ দেহে যত বিপাকীয় প্রক্রিয়া চলে তা পানির অভাবে বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে পানিকে ফ্লুইড অফ লাইফ বলা হয়।
উদ্ভিদের জীবনে পানির গুরুত্ব
উদ্ভিদের দেহে পানির প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। যথা-
# উদ্ভিদ কোষের প্রোটোপ্লাজম কে সজীব রাখতে পানির কোন বিকল্প নেই।
# উদ্ভিদের জৈবনিক প্রক্রিয়া হিসেবে পরিচিত প্রস্বেদন ও সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া চালু রাখতে পরিমান মত পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হয়।
# পানি একটি গুরুত্বপূর্ণ দ্রাবক। বিপাকীয় অনেক প্রক্রিয়ায় পানির গুরুত্ব অপরিসীম।
# উদ্ভিদের কোষ বৃদ্ধি ও চলনে পানির ভূমিকা রয়েছে।
উদ্ভিদের পানি শোষণ
উদ্ভিদের জীবনে পানি খুবই গুরুত্বপূর্ণ – উদ্ভিদ প্রধানত মূল এর মাধ্যমে মাটি থেকে পানি শোষণ করে। উদ্ভিদ মোট তিনটি প্রক্রিয়ায় সম্মিলিতভাবে পানি শোষণ কাজ সম্পাদন করে। প্রক্রিয়া তিনটি হলো ইমবাইবিশন, ব্যাপন এবং অভিস্রবণ। অধিকাংশ উদ্ভিদ পানির সাথে কিছু পরিমাণ খনিজ লবণ শোষণ করে।
ইমবাইবিশন
কলয়েড জাতীয় শুকনা শুকনা পদার্থের তরল পদার্থ শুষে নেয়ার প্রক্রিয়া কে ইমবাইবিশন বলে। সেলুলোজ, স্টার্চ, জিলেটিন ইত্যাদি হল কলয়েড জাতীয় পদার্থ হাইড্রোফিলিক পদার্থ। এরা তরল পদার্থের সংস্পর্শে এলে তা শুষে নেয়, আবার তরল পদার্থের অভাবে সংকুচিত হয়ে যায়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বর্ষাকালে বাতাসে জলীয় বাষ্প বেশি থাকায় কাঠের দরজার ইমবাইবিশন প্রক্রিয়ায় বাতাসে জলীয় বাষ্প শোষণ করে। ফলে কাঠের দরজা স্ফীত হয়ে যায় এবং বন্ধ করতে কষ্ট হয়।
ব্যাপন
যে প্রক্রিয়ায় কোন দ্রব্যের অনু বেশি ঘনত্বের এলাকা থেকে কম ঘনত্বের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে তাকে ব্যাপন বলে। যেমন- ঘরের এক কোণে কিছু সুগন্ধি ঢেলে দিলে তার সুগন্ধ সারা ঘরে ছড়িয়ে যায় ব্যাপন প্রক্রিয়া। কিংবা এক গ্লাস পানিতে কিছু চিনি ছেড়ে দিলে কিছুক্ষণের মধ্যেই গ্লাসের পানি বৃষ্টি হয়ে যায় ব্যাপন প্রক্রিয়া। ব্যাপন একটি ভৌত প্রক্রিয়া।
ব্যাপন চাপ ও ব্যাপন চাপ ঘাটতি
একই তাপমাত্রায় ও বায়ুমন্ডলীয় চাপে কোন পদার্থের বেশি ঘনত্ব বিশিষ্ট দ্রবণ থেকে কম ঘনত্ব বিশিষ্ট দ্রবণের দিকে ধাবিত হওয়ার প্রচ্ছন্ন ক্ষমতাকে ব্যাপন চাপ বলে। একই বায়ু চাপে কোন একটি দ্রব্যন ও দ্রাবকের ব্যাপন চাপ এর পার্থক্য কে ব্যাপনের চাপ ঘাটতি বলে।
অভিস্রবণ
একই দ্রব্ ও দ্রাবক যুক্ত দুটি ভিন্ন ঘনত্বের দ্রবণ একটি বৈষম্যভেদ্য পর্দা দ্বারা পৃথক থাকলে দ্রাবকের বৈষম্যভেদ্য পর্দা ভেদ করে নিম্ন ঘনত্বের দ্রবণ থেকে উচ্চ ঘনত্বের দ্রবণ এর দিকে প্রবাহিত হওয়ার প্রক্রিয়াকে অভিস্রবণ বলে। যেমন – পানিতে কিছু কিসমিস ডুবিয়ে দিলে কিছুক্ষণের মধ্যেই কিসমিস গুলো ফুলে টস টসে হয়ে ওঠে অভিস্রবণ প্রক্রিয়া।
ব্যাপন ও অভিস্রবণ এর তুলনা
১. সংজ্ঞাঃ
উচ্চ ঘনত্বের দ্রবণ থেকে কম ঘনত্ব দ্রবণের দিকে পদার্থের অণুগুলো ছড়িয়ে পড়াকে ব্যাপন বলে আর দুটি ঘনত্বের দ্রবণ এর মধ্যে একটি বৈষম্যভেদ্য পর্দা দ্বারা পৃথক করে রাখলে কম ঘনত্বের দ্রবণ থেকে উচ্চ ঘনত্বের দিক পরিবাহিত হওয়াকে অভিস্রবণ বলে।
২. পরিবাহিত পদার্থঃ
পদার্থের অণুগুলো পরিবাহিত হয় ব্যাপন প্রক্রিয়া । অন্যদিকে অভিস্রবণ প্রক্রিয়া পদার্থের অনু নয় দ্রাবক পরিবাহিত হয়।
৩. পর্দাঃ
ব্যাপন প্রক্রিয়ায় ভেদোভা বৈষম্যভেদ্য বা অর্ধভেদ্য পর্দা থাকে না। কিন্তু অভিস্রবণ প্রক্রিয়ায় দুটি দ্রবণের মাঝে বৈষম্যভেদ্য পর্দা থাকে।
৪. প্রক্রিয়ার ধরনঃ
ব্যাপন একটি ভৌত প্রক্রিয়া কিন্তু অভিস্রবণ ভৌত প্রক্রিয়া হলেও এতে রাসায়নিক প্রভাব বিদ্যমান।
৫ . কারণঃ
ব্যাপন পদার্থের ঘনত্বের চাপের ফলে ঘটে যাকে ব্যাপন চাপ বলে। আর অভিস্রবণ পদার্থের ঘনত্বের মাত্রা প্রশমিত করতে দ্রাবক যে চাপের ফলে উচ্চ ঘনত্বের দিকে যায় তার ফলে ঘটে ।একে অভিস্রবণ চাপ বলে।